ধর্ম কথার অর্থ তো আসলে ধারণ করা। কিন্তু সময়কে ধারণ করার বদলে অনেকসময়ই দেখা যায়, জগদ্দল পাথরের মতো অনড় হয়ে আছে ধর্মীয় আচারবিচার। যার সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধছে মানুষের। সম্প্রতি তেমনই এক ঘটনায় আইনি বিপাকে পড়লেন মধ্যপ্রদেশের পান্নার রানি। রীতিমতো হেনস্তাও করা হয়েছে তাঁকে। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পূজা করার অধিকার বরাদ্দ কেবল পুরুষদের জন্য। এক দুদিন নয়, ৩০০ বছর ধরেই চলে আসছে এমন নিয়ম। আর সেই নিয়মের অন্যথা করেই রীতিমতো হেনস্তার মুখে পড়তে হল খোদ রানিকে। হ্যাঁ, খোদ রাজপরিবারের জন্যও জারি একই নিয়ম। তাই জন্মাষ্টমীর সময় মন্দিরে ঢুকে ধর্মীয় আচারে অংশ নিতে গিয়েই বিপাকে পড়লেন রানি। এমনকি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে মামলাও দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রদেশে।
আরও শুনুন: শিবাজির হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার ছিল বাঘনখ, অবশেষে ভারতে ফিরছে সেই অস্ত্র
পান্নার রাজপরিবার মধ্যপ্রদেশের প্রাচীন রাজবংশ। কিন্তু সেই পরিবারের মহারানি জিতেশ্বরী দেবীর নামেই এবার দায়ের করা হল মামলা। অভিযোগ, মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে চেয়ে নিয়ম ভেঙেছেন তিনি। পুরোহিতদের আরও অভিযোগ, নেশাগ্রস্ত অবস্থাতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। আর প্রাচীন রীতিনীতিতে হাত পড়তেই বেজায় ক্ষুব্ধ মন্দিরের হর্তাকর্তারা। আসলে ওই মন্দিরের নিয়ম, কেবল রাজপরিবারের পুরুষেরাই ধর্মীয় প্রথাগুলি পালন করতে পারেন। দেবতার সামনে আরতি করার অধিকারও কেবল তাঁদেরই। সেখানে কোনও নারীর প্রবেশাধিকার পর্যন্ত নেই। সেই নিয়ম মেনেই চলতি বছরের জন্মাষ্টমী পুজোতেও রাজপরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রথামতো, রানি জিতেশ্বরীর ছেলের এই আচার পালনের কথা ছিল। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তিনি সেদিন মন্দির চত্বরে হাজির হননি। বদলে রানি মন্দিরে ঢুকে পড়েন। তাঁদের দাবি, রানিকে আরতি করতেও অনুমতি দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এরপর রানি গর্ভগৃহে প্রবেশের চেষ্টা করতেই গণ্ডগোল বাড়ে। ভক্তরা প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত রানিকে মন্দির থেকে কার্যত টেনেহিঁচড়েই বের করে দেওয়া হয়।
আরও শুনুন: যত নষ্টের গোড়া মাংস খাওয়া! পশুহত্যার কারণেই হিমাচলে ধস, মন্তব্য আইআইটি কর্তার
এমনিতে বাৎসল্য ভাবে গোপালের আরাধনা করেন অনেক নারীই। যশোদা যেভাবে ননীচোরা গোপালকে যত্নে লালনপালন করেছিলেন, সেই কথা মনে করেই জন্মাষ্টমী অর্থাৎ কৃষ্ণের জন্মতিথিতে তাঁকে পুজো করা হয়। সেখানে কোনও নারী জন্মাষ্টমীর পূজা করার অধিকার পাচ্ছেন না, তা শুনে খানিক অবাকও হয়েছেন অনেকেই। তবে নিজেদের পুরোনো নিয়ম জারি রাখার পক্ষেই সওয়াল করছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে পুজো করার অধিকার নিয়ে সেখানে বিতর্কের জল গড়াল আইনি পথ পর্যন্ত।