নারীসংসর্গে ‘না’। তাও এক-দুদিন নয়। ৪১ দিন ধরে। ব্রহ্মচর্য পালন করেই নাকি ‘হনুমান’ হয়ে ওঠার সাধনা করেন এই পুরুষেরা। বিষয়টা ঠিক কী? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কোনও নারীর সংসর্গে যাওয়া মানা। এমনকি নারীর কথা ভাবা যাবে না পর্যন্ত। তবেই হনুমানকে স্বরূপে ধারণ করতে পারবেন পুরুষেরা, এমনটাই বিশ্বাস করে পানিপথ। আর সেই বিশ্বাস থেকেই, প্রতি বছর দশেরার আবহে হনুমান হয়ে ওঠার সাধনা করেন এই অঞ্চলের একাধিক পুরুষ।
হ্যাঁ, পানিপথের হনুমান। এই নামেই নিজেদের ডাকেন এই পুরুষেরা। আর হনুমান হয়ে ওঠার জন্যেই ৪১ দিন ধরে সাধনা চলে তাঁদের। তার প্রধান অঙ্গ অবশ্যই নারীসংসর্গ থেকে বিরত থাকা। খাবার খেলেও, তা হয় নুনহীন। জীবনের স্বাদ-সাধ থেকে নিজেদের বিচ্যুত করে রাখেন ব্রতীরা। ভক্তদের বিশ্বাস, এইভাবেই হনুমানের মাহাত্ম্য অর্জন করেন ওই সাধারণ পুরুষেরা। তাঁদের পরনে থাকে লাল রঙের স্বল্পবাস, আর কোমরে সাদা ধটি। পায়ে ঘুঙুর। সারা গায়ে মাখানো হয় কমলা রঙের সিঁদুর। কোমরে বেঁধে দেওয়া হয় বেতের তৈরি লেজ। আর সবার শেষে ১৫-২০ কেজি ওজনের হনুমান মুকুট তাঁরা তুলে নেন মাথায়। এই অবস্থায় ভক্তদের আশীর্বাদ করেন ওই পুরুষরা।
পানিপথে রাম-রাবণের যুদ্ধ আর রামের জয় নিয়ে যত কথা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি উত্তেজনা হনুমানের বীরত্ব নিয়ে। সেখান থেকেই এই হনুমান স্বরূপ ব্রতের উদ্ভব। স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকেই এই প্রথা শুরু হয়েছিল। দশেরা পালনে বাধা দিয়েছিল ব্রিটিশেরা। তার প্রতিবাদ করেন এই অঞ্চলের সাধুরা। তাঁরা হনুমানের মতো সারা শরীরে সিঁদুর মেখে রামের প্রতি তাঁদের ভক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। এই ছিল তাঁদের পুজো, তাঁদের প্রতিবাদও। আর তখন থেকেই, এখনও পানিপথে চলে আসছে এই হনুমান স্বরূপ প্রথা।