‘পঞ্চায়েত ব্যবস্থা’ শুনলেই প্রছন্নভাবে হলেও খানিক পিছিয়ে পড়া এক প্রশাসনিক ব্যবস্থার ছবি ফুটে ওঠে। যদিও ২০২০ সালে ‘পঞ্চায়েত’ নামের ওয়েব সিরিজটির রিলিজের পর এ ছবিতে সামান্য হলেও বদল আসে। চূড়ান্ত জনপ্রিয় এই ওয়েব সিরিজটিতে বিভিন্ন মজাদার ঘটনার পাশাপাশিই শৌচালয়ের অপরিহার্যতা অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উঠে আসে। আর তাই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে ভারতের বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রাম পঞ্চায়েতের বাস্তব গল্পগুলো।
ভারতের বুকে ছোট্ট এক গ্রাম। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে সেখানেও হাতে হাতে ঘুরছে মোবাইল ফোন, গ্রাম্য সাদামাটা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া। আর তাই পঞ্চায়েত (Panchayat) থেকে নির্দেশ এল, প্রত্যেক গ্রামবাসীকে বাধ্যতামূলকভাবে অভ্যেস করতে হবে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’! এ কিন্তু কোনও জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজের গল্প নয়, বাস্তবেই এমন গ্রাম রয়েছে ভারতের বুকে। নিশ্চিতভাবেই এক উন্নয়নশীল আগামীর লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে দেশ। আর সেই উন্নয়নে শহরের মতোই শামিল হয়েছে ভারতের বেশ কিছু গ্রামও। সেসব গল্প শুনলে রীতিমত অবাক হতে হয়।
এ কথা বললে ভুল হয় না যে, ‘পঞ্চায়েত ব্যবস্থা’ শুনলেই প্রছন্নভাবে হলেও, খানিক পিছিয়ে পড়া এক প্রশাসনিক ব্যবস্থার ছবি ফুটে ওঠে। যদিও ২০২০ সালে ‘পঞ্চায়েত’ নামের ওয়েব সিরিজটির মুক্তির পর এ ছবিতে সামান্য বদল আসে। চূড়ান্ত জনপ্রিয় এই ওয়েব সিরিজটিতে দেখানো হয় ফুলেরা নামের এক গ্রাম, ও সেখানকার পঞ্চায়েত অফিসে ‘সচীব’ হয়ে আসা এক শহরের ছেলের বিচিত্র অভিজ্ঞতার গল্প। বিভিন্ন মজাদার ঘটনার পাশাপাশিই শৌচালয়ের অপরিহার্যতা অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উঠে আসে।
আর ঠিক তাই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে ভারতের বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রাম পঞ্চায়েতের (Panchayat) বাস্তব গল্পগুলো। উত্তরপ্রদেশ কিংবা বিহার বললেই যেন অনিবার্যভাবে আসে বিয়েতে মোটা অঙ্কের পণ নেওয়ার প্রসঙ্গ। এই উত্তরপ্রদেশ ঘেঁষা লতিফপুর গ্রামে, পঞ্চায়েতের উদ্যোগে শুরু হয়েছে সম্পূর্ণরূপে পণ-বিহীন বিয়ের ব্যবস্থা। এমনকি চালু হয়েছে এক যৌথ ভাণ্ডার, যেখানে খানিক চাঁদার ঢঙে টাকা জমা করা হয়। এই টাকার অংশই ব্যবহার করা হয় গ্রামে হওয়া যেকোনও বিয়ের ক্ষেত্রে!
আবার হাতের চুরি ভেঙে দিয়ে বৈধব্যের যে আনুষ্ঠানিক সূচনা চলে এসেছে আদি-অনন্তকাল ধরে, মহারাষ্ট্রের কোলাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তাতে চিরকালের মতো ইতি টেনেছে। প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন-যুক্ত যেসব পানীয় দেদার বিক্রি হয়ে থাকে, সেসবেও বাধ সেধেছে পঞ্চায়েত । মহারাষ্ট্রেরই অন্য আরেক গ্রামে আঠারো বছর বয়সের নিচে স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কর্ণাটকের ঠিন্দলু গ্রাম পঞ্চায়েতের (Panchayat) পক্ষ থেকে প্রত্যেক বাসিন্দার জন্য দেওয়া হচ্ছে জীবনবীমা। ভারতের ইতিহাসে এমন নজরকাড়া ঘটনা এই প্রথম! কর্ণাটকেরই ভাগড়া নামের আরেক গ্রামে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’-এর অংশ হিসেবে প্রত্যেক সন্ধ্যায় ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত টিভি আর মোবাইল ফোনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। উদ্দেশ্য, গ্রামবাসীদের নতুন করে সমাজমুখী করে তোলা।
এরই মাঝে ২০২৩ সাল নাগাদ পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণকে বাধ্যতামূলক করা হয়। এর জেরে একদিকে যেমন অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় যে মহিলা কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বাস্তবিকক্ষেত্রে কোনও পুরুষ কর্মী দখলদারি করছে, অন্যদিকে তেমনই বেশ কিছু ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো সামাজিক পরিবর্তনও দেখতে মেলে। গ্রাম্য মহিলাদের যে সমস্ত সমস্যার কথা এতদিন আড়ালেই রয়ে যেত, তাতে নতুন করে আলো এসে পড়ে। উত্তরপ্রদেশের রাজপুরে মহিলা ‘সরপঞ্চ’-এর নেতৃত্বে গ্রামকে প্লাস্টিক-বর্জিত করতে নানাবিধ পদ্ধতি নেওয়া হয়। তেলাঙ্গানার মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান আবার মদপানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পঞ্চায়েতের সাহায্য নিয়ে আদিলাবাদের প্রায় ৬০০টি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে বন্ধ হয় অগণিত মদের দোকান।
দেশ হিসেবে সার্বিক উন্নয়নের যে পথ, তা শুরু হয় গ্রাম থেকেই। আর তার প্রথম ধাপই নারী ক্ষমতায়ন। কেবল বইয়ের পড়াশুনো নয়, ‘লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট’, বিতর্ক, পক্ষসমর্থন ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতার মতো আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলাও একান্ত জরুরি গ্রামীণ মহিলাদের জন্য। এ সমস্ত সাধারণ প্রশাসনিক দক্ষতা পঞ্চায়েতের (Panchayat) বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পক্ষে বা বিপক্ষে মত প্রকাশের যোগ্য করে তুলবে তাঁদের। আর স্বপ্ন দেখাবে এক নতুন উন্নত আগামীর, যার সফলতার গল্প নিঃসন্দেহে সিনেমা-সিরিজকে হার মানাবে!