আকারে প্রকারে মানুষেরই মতো। কিন্তু আচরণে? ঠিক যেন একটি কুকুর। যে চার হাত পায়ে ভর করে চলে। কখনও কখনও ডেকেও ওঠে কুকুরের মতো সুরেই। জলে ভিজলে কুকুরের মতোই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। হ্যাঁ, এমনই এক কুকুর-মানবীর দেখা মিলেছিল ইউক্রেনে। কিন্তু কী রহস্য ছিল এই ঘটনার নেপথ্যে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিদেশি অলৌকিক কাহিনিতে শোনা যায় ওয়ারউলফের কথা। এমনিতে মানুষের মতো থাকলেও, বিশেষ বিশেষ তিথিতে তারা নাকি নেকড়ে-তে পরিণত হয়। কিন্তু এ গল্প তেমন কোনও অলৌকিক মিথকে ধরে নেই। এই কুকুর-মানবীর দেখা মিলেছিল বাস্তবেই। না, এখানে নারীটি যে চেহারার দিক দিয়ে কুকুরে পরিণত হতেন, এমন নয়। কিন্তু তার আচার আচরণ, হাবভাব, সবকিছুই ছিল একেবারে কুকুরের মতোই। ঠিক যেন মোগলির গল্প।
কিন্তু কেন হয়েছিল এমনটা?
আরও শুনুন: টেবিলের উপর আস্ত পাইথন, নির্বিকার মুখে খাচ্ছেন মহিলা, তাজ্জব নেটিজেনরা
না, জাঙ্গল বুক-এর সেই মোগলির মতো অনাথ ছিলেন না এই মহিলা। নাম তাঁর অক্সানা ওলেকসান্দ্রিভনা মালায়া। ১৯৮৩ সালের ৪ নভেম্বর ইউক্রেনে জন্ম হয় তাঁর। কিন্তু জন্ম দিলেও, শিশুটির প্রতি আদৌ কোনও টান ছিল না মদ্যপ দম্পতির। তেমন কোনও যত্নআত্তিও মিলত না তার। এমনকি খাবার জোটাও দুষ্কর হয়ে উঠত একেক সময়। আর সেখান থেকেই ঘটে বিপত্তি। এক শীতের রাতে খাবার খুঁজতেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়েছিল শিশুকন্যাটি। কিন্তু আর পথ চিনে বাড়িতে ফিরতে পারেনি সে। আশ্রয় নিয়েছিল একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। আর সেখানেই একদল কুকুরের সামনে পড়ে যায় সে। আশ্চর্যের কথা হল, মানুষের থেকে যে যত্ন পায়নি শিশুটি, সেই মানবিকতার পরিচয় দিয়েছিল ওই কুকুরগুলিই। শিশুটির গায়ে একটি আঁচড়ও পড়েনি। উলটে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তাঁকে আগলে রেখেছিল ওই কুকুরেরাই। ফলে তার মধ্যে ক্রমশ কুকুরসুলভ কিছু আচার আচরণ দেখা যায়। খবর পেয়ে প্রশাসন যখন মেয়েটিকে উদ্ধার করে, তখন দেখা যায় সে বেশ হিংস্র হয়ে উঠেছে। তাছাড়া কুকুরের মতো চার হাত-পায়ে হাঁটা, একইরকম সুরে ডেকে ওঠা, জিভ দিয়ে নিজের শরীর পরিষ্কার করার মতো কাজও করছে সে। একটি অনাথ আশ্রমে ঠাঁই পেলেও এই স্বভাবগুলি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি মেয়েটি। এমনকি মানুষের বদলে পশুদের সঙ্গে সময় কাটাতেই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিল সে। তার মা-বাবার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু তাকে কেউ আর বাড়িতে ফিরিয়েও নিয়ে যায়নি।
আরও শুনুন: অলৌকিক নয় লৌকিক, হৃৎপিণ্ড ছাড়াই ১ মাস বেঁচে ব্যক্তি, কীভাবে?
মনোবিদদের মতে, কুকুরদের সঙ্গে বেড়ে ওঠার পর হঠাৎ করেই মানুষের মধ্যে এসে পড়ার সঙ্গে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারেননি অক্সানা। শরীরের পরিণতি ঘটলেও তাঁর মানসিক বিকাশে অসংগতি থেকেই গিয়েছিল। অবশ্য, জীবনের শুরুতেই মানুষের যেমন পরিচয় তিনি পেয়েছিলেন, তারপর হয়তো আর মানুষ হয়ে উঠতেও চাননি অক্সানা মালায়া।