বিয়ে মানে তো শুধু দুটি মানুষের একসঙ্গে থাকা নয়। তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সমাজও। সেই জন্যই অনেকে বিয়েকে সামাজিক চুক্তির সঙ্গেও তুলনা করেন। তা চুক্তি থাকলে তার কিছু শর্তও থাকবে। কী ভাবছেন সুপাত্র হওয়ার প্রাথমিক শর্ত শিক্ষিত, রুচিসম্পন্ন, চাকুরিজীবী! তেমনটা ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। কারণ এসব থাকলেই হবে না। পাত্রকে হতে হবে ‘ক্লিন শেভড’। অর্থাৎ ভাল পাত্র হতে হলে গোঁফ-দাড়ি নৈব নৈব চ। কোথায় রয়েছে এই আশ্চর্য নিয়ম? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কার্তিক আরিয়ান থেকে শহিদ কাপুর, বলিউডের বহু তারকাই দাড়িতে বেশ হিট। সেই লুকে বহু হৃদয়ে দোলা লাগালেও রাজস্থানের এই সম্প্রদায়ের মধ্যে সে দাড়ির কদর নেই একেবারেই। বরং তেমন দাড়ির জন্য বিয়ের বাজারে বাতিলও হয়ে যেতে পারেন পাত্র।
শুনে অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। তবে এমন নিয়মই সম্প্রতি জারি করেছে কুমাবত নামে রাজস্থানের একটি বিশেষ সম্প্রদায়। পালি জেলার অন্তত ১৯টি গ্রামে বিয়ের ক্ষেত্রে এ নিয়ম অবশ্য পালনীয়। তেমনই ফতোয়া জারি করেছে সেখানকার পঞ্চায়েত।
বিয়ের বাজারে দাড়ি বা গোঁফওয়ালা পাত্রদের একেবারেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। তাঁদের মতে, ফ্যাশনের জন্য দাড়ি রাখা এক রকম। তবে বিয়ের আসরে রাজার তকমা দেওয়া হয় বরকে। আর ক্লিন শেভড লুকেই সবসময় বেশি মানায় রাজাকে। তাই বরের গোঁফ, দাড়ি একেবারেই থাকা চলবে না নতুন নির্দেশিকা মতে।
আরও শুনুন: তন্ত্রমন্ত্রের জের! সৌভাগ্য ফেরাতে ৪ বছরের মেয়ের মুখে সিঁদুর ঠেসে খুন করল বাবা
এখানেই শেষ নয়। বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে একগুচ্ছ নয়া নিয়ম ধার্য করেছে পঞ্চায়েত। বিয়ের খরচ কমানোর ব্যাপারেও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে সেখানে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ডিজে নাচ বা সমগোত্রীয় কোনও অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি বিয়ের অনুষ্ঠানে মাদক নেওয়ার মতো কাজও একেবারে নিষিদ্ধ বলে জানিয়ে দিয়েছে তারা। কী ভাবছেন, নিয়ম এখানেই শেষ! উহু। তালিকায় রয়েছে আরও একগুচ্ছ নিয়মকানুন। যেমন ধরুন, গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে হলুদ রংয়ের বাড়াবাড়ি মানা। বিয়েতে কনে যে পরিমাণ সোনা ও রূপোর গয়না পরতে পারবে, তার অঙ্কও বেঁধে দিয়েছেন তারা। খাবারের মেনুর ক্ষেত্রেও থাকছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ।
আরও শুনুন: মাত্র ১ পয়সার জন্য বেঁচে গেল ১০ হাজার টাকা, বানচাল ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ছক
বিয়ের অনুষ্ঠানে হাত খুলে খরচার প্রবণতা বাড়ছে দিনকে দিন। যার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের। পরিস্থিতি সামাল দিতেই এমন নিয়মকানুন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্প্রদায়ের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন কুমাবত সম্প্রদায়ের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। তাঁদের সকলের জন্যই এইসব নিয়ম অবশ্য পালনীয় বলে জানিয়ে দিয়েছে পঞ্চায়েত।
খরচ কমানোর বিষয়টি নাহয় বোঝা গেল। তাই বলে বিয়ের বাজারে দাড়ির প্রতি এমন বিদ্বেষ কিন্তু রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সব মিলিয়ে যা দাঁড়াচ্ছে, প্রেমিক হিসেবে ‘কবীর সিং’-দের যতই চাহিদা থাকুক না কেন, বিয়ের বাজারে যে তাঁদের নম্বর একেবারেই গোল্লা, তা কিন্তু পরিষ্কার করে দিয়েছে রাজস্থানের এই বিশেষ সম্প্রদায়ের বিয়ের নিয়মাবলী।