এক দেশ এক নির্বাচন চালু করতে তৎপর প্রধানমন্ত্রী মোদি সহ পুরো বিজেপি শিবির। পালটা আপত্তিতে অনড় বিরোধীরা। কিন্তু কথা হল, এইভাবে নির্বাচন করার ভাবনা মোদি প্রথম বলছেন না মোটেও। দেশে একইভাবে নির্বাচন হয়েছে এর আগেও। কখন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শেষ তিনটি লোকসভা নির্বাচনের ইস্তেহারেই এক দেশ এক ভোটের কথা তুলেছিল বিজেপি। তৃতীয় মোদি সরকার গঠনের পর সেই লক্ষ্য পূরণে তৎপর পদ্মশিবির। ইতিমধ্যেই এই বিল পেশের জন্য অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এই নিয়ম কার্যকর হলে সারা দেশে একসঙ্গে লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচনের আয়োজন করবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আর এইখানেই ঘোর আপত্তি তুলছেন বিরোধীরা। তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন, এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রের বদলে দেশকে উপহার দেবে স্বৈরতন্ত্র। কেন-না একেক অঞ্চলে যেমন খাদ্য-ভাষা-সংস্কৃতির বিভিন্নতা থাকে, তেমনই রাজনৈতিক বৈচিত্র্যও থাকে। দেশে নানা সময়ে ছোট বড় নানা ভোট হয় বলেই সেই ভিন্নমত উঠে আসার পরিসর থাকে। আর বিভিন্ন মতের এহেন সহাবস্থানকেই গণতন্ত্র মান্যতা দেয়। যদিও সে আপত্তি উড়িয়ে দেশজুড়ে এক নির্বাচনের বন্দোবস্ত করতেই বদ্ধপরিকর বিজেপি।
তবে কথা হচ্ছে, দেশজুড়ে একসঙ্গে একটিই নির্বাচন করার কথা যে মোদিই প্রথম বলেছেন, তা কিন্তু নয়। এর আগেও এই পথেই নির্বাচন হয়েছে দেশে। তাও এক নয়, একাধিক বার।
আরও শুনুন:
দেশের প্রথম নির্বাচনে ভোট দেওয়া হয়নি ২৮ লক্ষ মহিলার, কিন্তু কেন?
স্বাধীন হওয়ার পর এ দেশে প্রথম ভোট হয়েছিল ১৯৫১ সালে। ওই সময় লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গেই করেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই ভোটের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এক বাঙালিই। তিনি ভারতের প্রথম নির্বাচন কমিশনার সুকুমার সেন। তাঁর কাজ যে কতখানি কঠিন ছিল, সে কথা বলতে গিয়ে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ তাঁর ‘ইন্ডিয়া আফটার গাঁধী’-তে লিখেছেন, “একুশ বছর বা তার বেশি বয়সের ১৭ কোটি ৬০ লক্ষ ভারতীয় ভোট দেবে, তার মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ পড়তে বা লিখতে জানে না। প্রত্যেকটি ভোটারকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে হবে, নাম লিখে নথিভুক্ত করতে হবে।” শুধু সেবারই নয়, ১৯৫১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একসঙ্গেই লোকসভা ও বিধানসভা ভোট করিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
এদিকে ১৯৬৭ সালের চতুর্থ লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরে, কিন্তু নটি রাজ্যে ক্ষমতা হারায়। তবে বাংলা-সহ কয়েকটি রাজ্যে বিরোধী জোট যে ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের অনেকেরই পতন হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে না পেরে। উপরন্তু ১৯৭০ সালে লোকসভা ভেঙে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ফলে একসঙ্গে ভোটের চক্রটি ওলটপালট হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালের পর থেকে আর কখনোই একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়নি। এবার এক দেশ এক ভোটের প্রস্তাবে সেই পুরনো প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার কথাই উঠল ফের।