একজন বন্ধু নাকি একটি গোটা লাইব্রেরির সমান। সঠিক বন্ধু সঙ্গে থাকলে যে-কোনও বিপদই কাটিয়ে উঠতে পারে সবাই। কিন্তু বন্ধুত্ব কি কারও ভবিষ্যতের আর্থিক অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে? সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, অবশ্যই পারে। কেমন বন্ধু থাকলে একজন সাধারন পরিবারের সন্তান ভবিষ্যতে বিত্তশালী হয়ে উঠতে পারেন তাই নিয়েই মতামত দিয়েছে সমীক্ষা। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কথায় আছে, বন্ধুত্ব কোনও শর্ত মেনে হয় না। তেমনই বন্ধুর আর্থিক অবস্থা কেমন তা দেখেও কেউ বন্ধুত্ব করে না। বিশেষত ছোটদের ক্ষেত্রে তো এ-কথা একেবারেই খাটে না। তাদের কাছে বন্ধু মানেই নিজের সমমনষ্ক কেউ একজন। তার অর্থ প্রতিপত্তি আছে কি না, সে বিষয়ে কোনও আগ্রহ তাদের থাকে না। তবু এক সমাজে বিভিন্ন আর্থিক অবস্থানের মানুষ থাকেন, এ তো সত্যি কথাই। তাই দুই বন্ধুর আর্থিক অবস্থার তারতম্য যে থাকতে পারে, সে-কথাও অস্বীকার করা যায় না। শৈশবে, কৈশোরে হয়তো সেই বিভেদের আঁচ বন্ধুরা পায় না, কিন্তু এর প্রভাব পড়ে ভবিষ্যৎ জীবনে। মার্কিন মুলুকের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে এমনই এক অদ্ভুত দাবি। সেখানে বলা হচ্ছে, যদি কোন গরিব পরিবারের শিশু ধনী পরিবারের শিশুদের সঙ্গে বড় হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তার রোজগার অনেকটাই বেশি হতে পারে। সমীক্ষাকারী গবেষকদের মতে, অন্যান্য গরিব পরিবারের সন্তানদের তুলনায় তাদের রোজগার প্রায় ২০% বেশি হয় ভবিষ্যতে। এমনকি তাঁরা মনে করছেন এই ধনী-গরিবের বন্ধুত্বই নাকি সমাজের অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে ঊর্ধ্বমুখী করতে পারে।
আরও শুনুন: জ্ঞানের পথে বাধা নয় ধর্ম, রামায়ণ নিয়ে কুইজে সেরার খেতাব দুই মুসলিম পড়ুয়ার
সমীক্ষারত একজন গবেষকের মতে, একজন ভবিষ্যতে কেমন চাকরি করবে তা নির্ভর করে তার সামাজিক অবস্থানের উপর। অর্থাৎ সেই ব্যক্তির রোজগারের মাত্রা নির্ভর করে কেমন মানুষের সঙ্গে তাঁর নিত্যদিনের ওঠাবসা তার উপরে। এক্ষেত্রে খুব সহজেই একথা বলা যায়, যার বন্ধুমহলে ধনী-র সংখ্যা বেশি তাঁর রোজগারের মাত্রাও বেশিই হবে। এমনটাই মত ম্যাথু জ্যাকসন নামে এক গবেষকের। তিনি আরও মনে করেন, একজন ব্যক্তির চাকরি পাওয়ার জন্য যে সুযোগ দরকার তার বেশিরভাগটাই আসে বন্ধুবান্ধবের পরিচিতি থেকে। সমীক্ষাটি যদিও বেশ বৃহৎ পরিসরে করা হয়েছিল। জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের প্রায় ৭২ মিলিয়ন ইউজার এতে অংশ নেয়। মূলত ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সি মানুষদের বাছা হয়েছিল এই সমীক্ষার জন্য।
আরও শুনুন: সদ্যোজাত কন্যাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হল মাটিতে , ‘বেটি বঁচাও’-এর উল্টো পথেই কি হাঁটছে দেশ?
গবেষকদের দলে ছিলেন বিখ্যাত কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতীরা। সব মিলিয়ে তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে এই চমপ্রদ দিকটিই। গবেষকেরা মনে করছেন, ছোটবেলাতে যে আর্থিক অবস্থা কেউ চোখের সামনে দেখে, ভবিষ্যতে সে তার কাছাকাছি পৌঁছাতে চায়। আর তাই তাঁর রোজগারের ঝোঁক বা অভিমুখটাও ঘরে যায় অন্যদিকে। অর্থাৎ এর পিছনে একটি মনস্ত্বাত্ত্বিক দিকও আছে। আর এই তত্ত্বকে গবেষকরা নাম দিয়েছেন, ‘ক্রস ক্লাস ফ্রেন্ডশিপ’। যেখানে বার বার বলা হচ্ছে আর্থিক ভাবে অসম মানুষদের মধ্যে বন্ধুত্বের কথা। শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও পজিটিভ প্রভাব ফেলে এমন ব্যবস্থা।