স্বাধীনতার বর্ষপূর্তি। পরাধীনতার সময় পেরিয়ে কীভাবে এগিয়ে চলেছে দেশ, সেই সাফল্যকে ছুঁয়েছেনে দেখার দিন। এমনই দিনে বিশ্বের দরবারে আবারও মাথা উঁচু হল ভারতবাসীর। জাতীয় সংগীতের স্রষ্টা বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এদিন বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করল নোবেল কমিটি। ঠিক কী পদক্ষেপ করা হয়েছে এই আন্তর্জাতিক সংস্থার তরফে? আসুন শুনে নিই।
তাঁর কলম ভারত জাগরণের শরিক। শয়ে শয়ে মানুষকে জাতীয়তাবোধের মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিল তাঁর লেখা। সেই রবীন্দ্রনাথের গানেই যে ভারতভূমের প্রকৃত বর্ণনা ফুটে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। পাঞ্জব-সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠা সহ দেশের প্রতিটা কোণ যেভাবে বাংলার সুরে বেঁধেছিলেন তিনি, তা তুলনাতীত। গোটা বিশ্বে তিনিই একমাত্র কবি, যাঁর গান দুটি দেশে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা পেয়েছে। এবার সেই জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমেই আবারও বিশ্বের দরবারে ভারতবাসীর মাথা উঁচু করলেন কবিগুরু।
আরও শুনুন: গৃহবধূ থেকে বিপ্লবী, অস্ত্র আইনে প্রথম সশ্রম কারাদণ্ড হয় দুকড়িবালা দেবীর
স্বাধীনতার সূর্য তখনও অস্তমিত। একদিকে বিপ্লবীরা দেশমাতৃকার সেবায় প্রাণ বির্সজন দিচ্ছেন। অন্যদিকে দেশবাসীর মনে জাতীয়বাদী চেতনার আগুন জ্বালাচ্ছেন কবি সাহিত্যিকরা। এই আবহে কবিগুরু রচনা করলেন ‘ভারত-বিধাতা’। ভারতভূমের বর্ণনার সঙ্গে দেশবাসীকে জাগিয়ে তোলার মন্ত্র। ১৯১২ সালে এই কবিতা প্রকাশিত হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়, যা ছিল ব্রাহ্ম সমাজের মুখপত্র। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই ‘ভারত-বিধাতা’ কবিতার একটি অংশকেই স্বাধীন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালে সরকারি ভাবে স্বীকৃত হয় গানটি। তবে তার আগে অবশ্য ১৯১১ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সভায় প্রথমবার গাওয়া হয়েছিল এই গান। স্বাধীনতা দিবসের দিন, সেই জাতীয় সঙ্গীতের ইংরেজি অনুবাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করল নোবেল কমিটি। যা লিখেছিলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এদিন কবিগুরুর নিজে হাতে লেখা সেই অনুবাদের কাগজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে নোবেল কমিটি। সেইসঙ্গে কোথায় এবং কখন তা লেখা হয়েছিল, সে কথাও উল্লেখ করে তারা। আসলে বাংলার পাশাপাশি ইংরাজিতেও রীতিমতো দক্ষ ছিলেন কবিগুরু। তাই নিজের একাধিক লেখা তিনি নিজেই ইংরাজিতে অনুবাদ করে গিয়েছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম এই ভারতবিধাতা কবিতাটি। জানা যায়, ১৯১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের বেসান্ত কলেজে থাকাকালীন এই অনুবাদ করেছিলেন তিনি। এতদিন অনেকের কাছেই যা অজানা ছিল।
আরও শুনুন: তোলা হয় না জাতীয় পতাকা, থাকে না ছুটিও , কোন কোন দেশে নেই স্বাধীনতা দিবস?
শুধু ভারতেই নয়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এশিয়ার মধ্যে প্রথম নোবেলজয়ী। তাই তাঁর বিশেষ মর্যাদা তো রয়েছেই। তবে স্বাধীনতা দিবসের দিন এমনভাবে কবিগুরুকে সম্মান জানানোয় একইসঙ্গে উজ্জ্বল হয়েছে দেশের নামও। স্বাধীনতার এত বছর পরেও যে রবীন্দ্রনাথ একইভাবে প্রাসঙ্গিক, একইরকম সম্মাননীয়, নোবেল কমিটির কাজে সে কথাই প্রমাণিত হল আরও একবার।