দেশে ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। তার জেরে কি আবার শুরু হবে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের রুটিন? বাড়িতে বসে কাজ করাই কি বেশি সুবিউধাজনক, নাকি অফিসেই ফিরতে চাইছেন কর্মীরা? কী জানাল সমীক্ষা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
অতিমারি ও তার পরবর্তী সময়ে জীবন বদলেছে অনেকটাই। পাশাপাশি মারণ ভাইরাসের আকস্মিক ধাক্কায় অনেকখানিই বদলে গিয়েছে আমাদের এতদিনের চেনা কাজের জগৎ। লকডাউন নামের অচেনা শব্দটি বুঝিয়ে দিয়েছে, কাজ বন্ধ হওয়ার থেকে চলাটাই বেশি জরুরি, তা সে যেভাবেই হোক না কেন! দুবছরের মহামারির জেরে অনেক সংস্থাই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর মাধ্যমে কাজ চালাতে বাধ্য হয়েছিল। ক্রমশ অবস্থা পালটেছে, তবে কর্মীদের সুবিধার কথা ভেবে অনলাইন কাজের অভ্যাস জারি রেখেছে তাদের অনেকেই। কেউ কেউ আবার কর্মীদের ফিরিয়ে এনেছে অফিসে। আবার কোনও কোনও সংস্থা কখনও অফিস আর কখনও বাড়ি, দুয়ে মিলিয়ে একটা হাইব্রিড মডেলও চালু করে ফেলেছে। কিন্তু দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় প্রশ্ন উঠছে, এরপর কীভাবে চলবে কাজ? আর এই ইস্যুতে কর্মীদের ভোট কোনদিকে, সম্প্রতি সেই সমীক্ষাই চালিয়েছেন একদল গবেষক।
কী জানাচ্ছে সমীক্ষার ফলাফল?
আরও শুনুন: মিলছে না চাকরির খোঁজ! ২২০০ কর্মীকে ছাঁটাইয়ের পথে কর্মসংস্থান করা সংস্থা
দেখা যাচ্ছে, ৬৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন বারিতে বসে একা কাজ করলেও তা তাঁদের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে কোনও প্রভাব ফেলছে না। বরং একসময় অফিসে যাওয়াটা যেমন বাধ্যতা বলে মনে হত, বর্তমানে দেশের ৭৮ শতাংশ কর্মীই মনে করছেন, এখন তাঁরা ইচ্ছেমতো অফিসে যেতেই পছন্দ করেন।
তবে এর উলটো ছবিটাও কিন্তু রয়েছে। বাড়ি থেকে কাজ মানে পরিবারের সঙ্গে আরেকটু বেশি সময়, নিজের ঘরে নিজের পছন্দের বিছানায় বা সোফায় গড়িয়ে গড়িয়ে কাজ করার মজা- এসব যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে অসুবিধাও। ওয়ার্ক ফ্রম হোম কালচারে হারিয়েছে ধরাবাঁধা কাজের সময়। যখন তখন কাজ এসে কড়া নাড়ছে দরজায়। যা অনেকসময়েই পরিবারের সময় ছিনিয়ে নিচ্ছে অযাচিত ভাবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, অফিসে যে পরিবেশে, যে ধরনের চেয়ার-টেবিল বা আলোয় আমরা কাজ করি, তা আমাদের শরীরের জন্য অনেকটাই বৈজ্ঞানিক। সেই সুবিধা মেলে না আমাদের বাড়িতে। আর তাই, অফিসে গিয়ে কাজ করতেও ইচ্ছুক অনেকেই। কারণ ৭১ শতাংশ মানুষ জানাচ্ছেন, নিজেদের প্রমাণ করার জন্য বাড়ি থেকে আরও অনেক বেশি কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের।
আর কেবল কাজই তো নয়। অফিসে ইচ্ছে হলেই কোনও সহকর্মীর টেবিলে গিয়ে তাঁর সঙ্গে খানিক হাসি তামাশা করা যায়, কিংবা কাজের কথাও বলা যায়। ‘ডেস্ক বম্বিং’ নামে পরিচিত এই প্রবণতাটির সুযোগ তো ওয়ার্ক ফ্রম হোমে মেলে না। কিন্তু ভালভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে এই প্রবণতাকে জরুরি বলেই মনে করছেন অন্তত ৬২ শতাংশ চাকুরে, বিশেষত অল্পবয়সিরা।
আরও শুনুন: কাজ শেষ করতে অফিসেই কাটাতেন সারা রাত, সেই কর্মীকেও ছাঁটাই করল টুইটার
সব মিলিয়ে এ কথা স্পষ্ট, যে, কাজের জগতে একটা বড় বদল এসেছে। বদলেছে কাজ ও কাজের পরিবেশকে দেখার চোখও। এই পরিস্থিতিতে কাজের জন্য সহায়ক হবে কোন পদ্ধতি, সে বিষয়ে সংস্থা ও কর্মী, দুই তরফের মধ্যেই আলোচনা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন গবেষকরা।