স্বামীর মৃত্যুর পর চরম হতাশায় ভুগছিলেন বৃদ্ধা। সেই সুযোগে সহজেই তাঁর মন জয় করে নেন এক ‘ভারচুয়াল বন্ধু’। কয়েক মাসের আলাপেই বন্ধুত্ব গড়ায় ভরসার জায়গায়। আর সেই ভরসাকে হাতিয়ার করেই বৃদ্ধার কাছ থেকে ৩৪ লক্ষ টাকা লুট করলেন সেই ‘বন্ধু’। আসলে ঠিক কী ঘটেছে? আসুন, শুনে নিই।
চরম হতাশার দিনে আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছিলেন এক ‘ভার্চুয়াল বন্ধু’। অল্পদিনের পরিচয়েই তাঁকে নিজের খুবই কাছের মানুষ ভেবে নিয়েছিলেন এক প্রবাসী বৃদ্ধা। কিন্তু সেই ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েই বৃদ্ধাকে খোয়াতে হল ৩৪ লক্ষ টাকা! নিজের ভুল বুঝতে পেরে সাইবার ক্রাইমে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করলেন বছর ৬৩-র প্রবাসী ভারতীয় বৃদ্ধা।
আরও শুনুন: লকডাউন যেন এখনও চলছে! করোনার ভয়ে ৩ বছর গৃহবন্দি মা-মেয়ে, উদ্ধার করল পুলিশ
স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই চরম নিঃসঙ্গতায় ডুবে থাকতেন এই প্রবাসী বৃদ্ধা। মার্কিন নাগরিক হলেও প্রতি বছরই কয়েক মাস ভারতেই কাটিয়ে যান তিনি। প্রতারণার ঘটনাটিও ঘটেছে গুজরাতের ভাসনা এলাকায়। এখানে থাকাকালীনই অনলাইনে আন্ড্রেজ মার্টিনেজ নামে এক স্কটল্যান্ডের ব্যক্তির সঙ্গে অনলাইনে আলাপ হয় তাঁর। বৃদ্ধার দাবি, প্রথমে মার্টিনেজ তাঁকে সমবয়সি হিসাবেই পরিচয় দিয়েছিলেন। আলাপ হওয়ার পর থেকেই বেশ নিয়মিত কথা শুরু হয় তাঁদের মধ্যে। কথার অছিলায় বৃদ্ধার বর্তমান পরিস্থিতির সবটাই নাকি জেনে ফেলেছিলেন মার্টিনেজ। এমনকী সব কিছু জানার পর বৃদ্ধাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। যদিও সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন বৃদ্ধা। পরিবর্তে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে থাকার কথা বলেন। সেই ঘটনার কিছুদিন পরেই বৃদ্ধাকে মার্টিনেজ জানান যে, কোনও কারণে তাঁর সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর কাছে যা নগদ টাকা ছিল, তার সবই লুট হয়ে গিয়েছে। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বিপদ শুনে দু মাসের মধ্যে প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা মার্টিনেজকে পাঠিয়ে দেন বৃদ্ধা। যাতে খুশি হয়ে বৃদ্ধাকে কিছু উপহারও পাঠান মার্টিনেজ। এতদিন পর্যন্তও কিছুই বুঝতে পারেননি বৃদ্ধা।
আরও শুনুন: ‘মেরি ক্রিসমাস’ বললেই কারাবাস! কোন দেশে জারি এমন আইন?
বৃদ্ধার অভিযোগ, উপহার পাঠানোর কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর কাছে এক মহিলার ফোন আসে। যিনি নিজেকে মুম্বইয়ের শুল্ক আধিকারিক পরিচয় দিয়ে বলেন, ওই উপহারের জন্য বৃদ্ধাকে জরিমানা দিতে হবে। ভয় পেয়ে সেখানেও প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা দেন বৃদ্ধা। এখানেই শেষ নয়, এরপর নাকি আরও এক ব্যক্তি নিজেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে বৃদ্ধার কাছ থেকে টাকা চান। আশ্চর্যভাবে এই কয়েকদিনে মার্টিনেজের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারেননি বৃদ্ধা। যার দরুন তিনি অবশেষে বুঝতে পারেন বিরাট কোনও জালিয়তি চক্রের ফাঁদে পড়েছেন তিনি। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে সাইবার ক্রাইমের দ্বারস্থ হন তিনি। সেখানেই স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দেওয়া মার্টিনেজের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগের ভিত্তিতে, ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।