রাতের অন্ধকারে প্রায় নিঃশব্দে এসে তাঁরা তছনছ করতেন শত্রু ঘাঁটি। সোভিয়েত এই বাহিনীর পোশাকি নাম ছিল ৫৮৮ নং নাইট বম্বিং রেজিমেন্ট। নাজিরা তীব্র বিদ্বেষে নাম দিয়েছিল ‘নাইট উইচেস’। প্লাইউড দিয়ে বানানো বিমান নিয়ে তাঁরা নাজিদের ওপর অন্তত তেইশ হাজার টন বোমা ফেলেছিল। শুনে নিই সেই দুর্ধর্ষ লড়াকু মহিলা বিমান বাহিনীর গল্প…
বিলিতি লোককথা বলে, ডাইনিরা নাকি ঝাঁটায় চড়ে উড়ে বেড়ায়। নিঃশব্দে। তছনছ করে দেয় ঘর-গেরস্থালি। তেমনই আসত এরা। রাতের অন্ধকারে, প্রায় নিঃশব্দে। ঝাঁটায় নয় অবশ্য, প্লেনে। কিন্তু দামি কোনও এরোপ্লেন নয়। তারা আসত প্লাইউড দিয়ে বানানো বাই-প্লেনে। বোমায় ঝাঁঝরা করে নিমেষের মধ্যে উড়ে যেত আবার। ৫৮৮ নং নাইট বম্বিং রেজিমেন্ট, এই ছিল তাদের পোশাকি নাম। শত্রুপক্ষ অবশ্য তীব্র বিদ্বেষে নাম দিয়েছিল, ‘নাইট উইচেস’। রাত্তিরের ডাইনি। এই বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজিদের ওপর অন্তত তেইশ হাজার টন বোমা ফেলেছিল। ভাবতে পারেন?
আরও শুনুন – Maida Bilal: নদী আগলে বসে ৫০০ দিন, এই মহিলার লড়াইকে কুর্নিশ বিশ্বের
মহিলাদের ফ্রন্টলাইনে পাঠানোর ইচ্ছে সোভিয়েত সরকারের ছিল না প্রথমে। কিন্তু জার্মানরা তাদের যেভাবে পর্যুদস্ত করে ফেলছিল, বিকল্প উপায় ভাবা ছাড়া গতিও ছিল না। দ্রুত জয় হাসিল করার লক্ষ্যে জার্মানরা শুরু করেছিল, ‘অপারেশন বারবারোসা’। তাদের বাড়তি সুবিধে দিচ্ছিল কঠিন শীত। হিমশিম খাচ্ছিল রেড আর্মি। জার্মানরা ক্রমশ লেনিনগ্রাদের একেবারে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছিল। এই সময়েই, সলতেটা পাকালেন মারিনা রাসকোভা। তিনিই সোভিয়েতের প্রথম মহিলা যুদ্ধবিমান চালক। দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে অসংখ্য রেকর্ড ছিল তাঁর। সোভিয়েতের অজস্র মহিলা তাঁকে চিঠি লিখতেন, বোমারু বিমান দলে যোগ দিতে চেয়ে। যুদ্ধে তাঁরা কেউ হারিয়েছেন নিজের বাবাকে, কেউ ভাইকে, কেউ স্বামী বা প্রেমিককে। কারও চোখের সামনেই জার্মান বাহিনী ধূলিসাৎ করে দিয়েছে তাঁর গোটা গ্রাম। এতগুলো চিঠি! মারিনার ভেতরে ভেতরে দানা বেঁধে উঠছিল একটা সংকল্প। তাঁর দেশের এত এত প্রাণ ঝরে যাচ্ছে, আর তিনি কিচ্ছু করতে পারবেন না? রাষ্ট্রনায়ক স্ট্যালিনকে অনুরোধ করে বসলেন মারিনা, তিনি মহিলাদের একটা বিমানবাহিনী গড়ে তুলতে চান।
আরও শুনুন – ডানাওয়ালা মানুষ নাকি অন্য কিছু! মৃত্যুর বার্তা বয়ে আনে রহস্যময় Mothman
সম্মতি পাওয়া গেল শেষমেশ। অক্টোবর, ১৯৪১। তৈরি হবে মহিলা এয়ারফোর্সের তিনটে দল। দুহাজার আবেদনপত্রের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হল চারশ জনকে। সতেরো থেকে ছাব্বিশের মধ্যে বয়স সবার। বেশিরভাগই ছাত্রী। স্ট্যালিনগ্রাদের উত্তরে ছোট্ট শহর এঙ্গেলসে চলতে লাগল প্রশিক্ষণ। যে প্রশিক্ষণ নিতে একজন সেনার গড়পড়তা দেড়-দু বছর লাগে, সেই ট্রেনিং তাঁরা শেষ করলেন কয়েক মাসেই। পাইলট, নেভিগেটর, গ্রাউন্ড স্টাফের কাজ, পাশাপাশি প্লেনের দেখভাল— শিখলেন সব কিছু। … বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।