পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে দগদগে ক্ষত রেখে গেছে, তার জন্য যুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি দায়ী নাৎসি অত্যাচার। কালো মানুষদের উপর আক্রমণ পৃথিবী এর আগেও দেখেছিল, পরেও দেখেছে। কিন্তু সাদা চামড়ার কিছু মানুষ একই দেশের একই রঙের একদল মানুষকে পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলার ব্রত নিয়েছে, এমন ঘটনা কেউ আগে ভাবতেও পারেনি। কিন্তু সেই সময়েও ওই বিপন্ন মানুষদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কেউ কেউ। শুনে নেওয়া যাক তেমনই একজনের কথা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানিতে যে ইহুদিনিধন যজ্ঞের আগুন জ্বলেছিল, তা থেকে রেহাই পায়নি ছোট্ট শিশুরাও। হিটলার জার্মানিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইহুদিদের ধরপাকড়, খুন করা শুরু হয়ে গিয়েছিল। গড়ে উঠতে শুরু করেছিল একের পর এক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। যেখানে বাচ্চা বুড়ো নারী পুরুষ কতশত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এমনকি জার্মানির আশেপাশের জার্মান-অধ্যুষিত অঞ্চলেও থাবা বাড়িয়েছিল নাৎসিরা। সেই সময়েই শিশুদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন এই মানুষটি। নাম নিকোলাস উইনটন। জাতিতে ইহুদি, তবে তাঁর জন্মের আগেই জার্মানি ছেড়ে লন্ডনে চলে আসে তাঁর পরিবার। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগের বছরে যখন জার্মানিতে ভয়ংকর খ্রিস্টেইনাখট্ ঘটে গেল, উইনটন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারলেন না। নিজের সর্বস্ব পণ করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তাঁর বিপন্ন জাতির দিকে।
আরও শুনুন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ‘ভূত’, নাস্তানাবুদ হয়েছিল দুর্ধর্ষ নাৎসি বাহিনীও
১৯৩৮ সালের ক্রিসমাসের আগে এক রাতে গোটা জার্মানি জুড়ে ভয়াবহ গণআক্রমণ চালায় নাৎসি বাহিনী। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ইহুদিদের হাজার হাজার বাড়িঘর, দোকানপাট, অফিস, স্কুল, হাসপাতাল, উপাসনাগৃহ সিনাগগ। সরকারি হিসেবে সে রাতে নিহত ইহুদির সংখ্যা ছিল শ-খানেক, আর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল তিরিশ হাজারের বেশি মানুষকে। সিনাগগগুলির কাচের কারুকাজ অজস্র টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিল সেই ধ্বংসস্তূপে। সেখান থেকেই এই রাতকে চিহ্নিত করা হয় খ্রিস্টেইনাখট্ বা ‘ক্রিস্টাল নাইট’ নামে।
আরও শুনুন: প্রাসাদ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল আস্ত ঘর! পৃথিবীতে এটাই নাকি অষ্টম আশ্চর্য
নাৎসিদের নোংরা আগ্রাসন যে এখানেই থামবে না, বরং এই সবে শুরু, সে কথা আন্দাজ করতে পারছিলেন অনেকেই। জার্মানির পাশের দেশ চেকোস্লোভাকিয়া, সেখানেও বাস করেন অসংখ্য জার্মান নাগরিক, যাঁদের অনেকেই জাতিপরিচয়ে ইহুদি। তাঁদের বাঁচানোর জন্য সেখানে উঠেপড়ে লেগেছেন শরণার্থী সমস্যা নিয়ে কাজ করা কিছু সমাজসেবী। চেক রাজধানী প্রাগে পৌঁছে তাঁদের দলে যোগ দিলেন উইনটন। তাঁর পাখির চোখ, যে করেই হোক, ওই দেশের ইহুদি শিশুদের রক্ষা করতে হবে নাৎসিদের কুৎসিত থাবা থেকে।
শুনে নিন বাকি অংশ।