নেটদুনিয়া থেকে নেওয়া কোনও ছবি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার আগে আমরা হাজারবার চিন্তা করে নিই, কপিরাইট লঙ্ঘনের দায়ে পড়ব না তো? যথাযথ ঋণ স্বীকার করলেও সবসময় যে সব ছবি ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে ফেলা যায় না, তার কারণ এই কপিরাইট। কিন্তু একটি বিশেষ ধরনের ছবির ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়। কেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রতি বছর একটি বিশেষ সময়ে এমন একগুচ্ছ ছবি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবী জুড়ে। সেসব ছবির কোনও কপিরাইট নেই। কী সেই ছবিগুলি? কে-ই বা আঁকেন সেই ছবিগুলিকে?
উত্তরগুলোই দেওয়া যাক প্রথমে। ছবিগুলি সেই বছরের নোবেলজয়ীদের। আঁকিয়ের নাম নিকোলাস এমেহেদ।
আলফ্রেড নোবেলের তহবিল এখনও তার কাজ করে চলেছে। প্রতি বছরই নোবেল পুরস্কার পান কেউ না কেউ। কোন বিষয়ে কে পাচ্ছেন চলতি বছরের নোবেল, সেই সিদ্ধান্ত হওয়ার পর নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে তা ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। সেই ঘোষণার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় বিজয়ীদের ছবিও। না, কোনও ফটোগ্রাফ নয়। কয়েকটি রেখায় ফুটিয়ে তোলা মুখ। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো রেখার কয়েকটি আঁচড়, আর সামান্য হলুদের আভায় জীবন্ত হয়ে ওঠেন বিজ্ঞানী-লেখক-চিন্তাবিদরা। কিন্তু সেই ছবিগুলি যে কে আঁকেন, সে খোঁজ রাখেন আর কজন!
আরও শুনুন: লম্বা নাকে গিনেস রেকর্ড, তুরস্কের মেহমত আজিউরেক যেন জীবন্ত বিস্ময়
তিনিই নিকোলাস এমেহেদ। যাঁর তুলির নিপুণ টানে প্রাণ পায় নোবেলজয়ীদের ছবি। নোবেল কমিটির হেড কোয়ার্টার যে শহরে, সেই সুইডেনের রাজধানী শহর স্টকহোমেই থাকেন নিকোলাস। ২০০৯ সাল থেকে ছবি আঁকাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন নিকোলাস। আর ২০১২ সালেই তাঁর ডাক পড়েছিল নোবেল কমিটিতে। শিল্প বিভাগের পরিচালক হিসেবে কমিটিতে যোগ দেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকে নোবেলজয়ীদের ছবিও আঁকতে শুরু করেন নিকোলাস। অবশ্য ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। ফলে নোবেল কমিটির ডাক আসার আগে তাঁর জানার উপায় নেই, সে বছরও নোবেলজয়ীদের নাম আগেভাগেই তিনি জেনে যাবেন কি না। প্রথমদিকে কালো, হলুদ আর নীল রঙ দিয়ে আঁকা হত নোবেলজয়ীদের ছবি। এখন তাতে যে হলুদ আভা চোখে পড়ে, সেই রংটির উৎস এক ধরনের ধাতব পাত।
আরও শুনুন: ক্যানসার সামলে জনসেবা, কীভাবে দিল্লির ‘মটকা ম্যান’ হয়ে উঠলেন নটরাজন?
সেই ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত, সব নোবেল বিজয়ীদের পোর্ট্রেটের রূপকার তিনিই। নিকোলাস এমেহেদ। অথচ এই ছবিগুলির কোনও কপিরাইট নেই। তাই খ্যাতির ভাগে প্রায় শূন্য। এক-একটি পোর্ট্রেট আঁকার জন্য খুব বেশি সময়ও পান না তিনি। কিন্তু কোথাওই ক্ষোভ নেই শিল্পীর। পৃথিবীর সেরা প্রতিভাদের জন্য এই পরিশ্রমকে হাসিমুখেই মেনে নিয়েছেন নিকোলাস এমেহেদ। কেউ তাঁর নাম জানুক আর না-ই জানুক, নোবেলজয়ীদের সারাজীবনের সাধনাকে এভাবেই কুর্নিশ জানিয়ে চলেছেন নিকোলাস এমেহেদ।