একজন ক্রেতা কি সংস্থার মহিলা কর্মীর সঙ্গে প্রেম করতে পারেন! অথবা প্রেম না হলেও নিতান্ত ফ্লার্টিং! প্রশ্নটা যে নৈতিকতার তা অস্বীকার করা যায় না। আর সে প্রশ্ন তুলেই সরব হয়েছেন নেটিজেনরা। সংস্থার কোন কাজে রেগে গিয়ে এমন প্রশ্ন তুললেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। চোখে চোখ। হয়তো বিরাট কোনও ব্যাপার নয়। তবে এই সাধারণ সূচনাই একদিন ফোটাতে পারে প্রেমের গোলাপ। অসংখ্য প্রেমের কাহিনিতে আমরা তা জেনেছি। দেখেছি সিনেমাতেও। অথচ সেরকমই এক ছাপোষা প্রেমের দৃশ্য নিয়ে বেজায় ক্ষিপ্ত নেটিজেনরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন নৈতিকতার। তাঁদের আপত্তি জায়গাটা আবার নেহাত ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। আর সেই আপত্তি মূলত একটি রেস্তরাঁর বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে।
আরও শুনুন: হার মানছেন তাবড় হিরোরা, কোন ক্ষেত্রে রোজগারে টেক্কা শুধু নায়িকাদেরই?
খাদ্যরসিকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই সংস্থা। শুধু খাবারের কারণে নয়। নিরিবিলিতে বসে খানিক আড্ডা দেওয়া কিংবা প্রেমের গোড়ায় প্রথম সাক্ষাতের জায়গা হিসাবেও এই রেস্তরাঁ চেনের আউটলেটকে
বেছে নেন অল্পবয়সিরা। আর তাই সংস্থাটি তাঁদের বিজ্ঞাপনে রেখেছিল একটি প্রেমের গল্প-ই। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক তরুণ এসে বসেছেন। আর তাঁর কাছে অর্ডার বুঝে নিতে এসেছেন সংস্থার এক সুন্দরী তরুণী কর্মী। সেই প্রথম দেখা তাঁদের। চোখে চোখে কী যেন একটা কথা হয়ে গেল! এরপর তরুণ আর ওই তরুণী কর্মীর দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছেন না। খাওয়া-দাওয়া সেরে তিনি যখন দাম মেটাতে কাউন্টারে যাচ্ছেন, তখনও দেখা গেল, তিনি অন্য কোনও কাউন্টারে যাচ্ছেন না। এমনকী ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও যাচ্ছেন না। বরং তরুণী ঠিক যে কাউন্টারে সেখানেই যাচ্ছেন। দুজনেই দুজনকে দেখে মৃদু হাসলেন। এরপরই আসছে বিজ্ঞাপনের মূল বার্তা। তাতে বলা হচ্ছে, ১৭৯ টাকায় শুধু খাওয়া নয়, আরও অনেক কিছুই হতে পারে।
This is outrageous and disgusting beyond words
1. You are inviting your customers to hit on your employees
2. Creating potentially unsafe workplace for your female employees
3. Objectifying your female staff for profit by suggesting your customers can flirt and find a date here— akshay sethi (@akshay_sethii) June 7, 2023
আর ঠিক এই কথাটিতেই বেজায় চটেছেন নেটিজেনরা। তাঁদের বক্তব্য, বিজ্ঞাপনে যে প্রেমের গল্প দেখানো হয়েছে, তাতে একাধিক আপত্তিকর ব্যাপার রয়েছে। এই বিজ্ঞাপন তো ক্রেতাদের ডাক দিচ্ছে, যাতে তাঁরা নির্দ্বিধায় সংস্থার মহিলা কর্মীর সঙ্গে ফ্লার্ট করতে পারেন। একজন মহিলার জন্য এরকম কাজের পরিবেশ কি খুব সুখকর? নেটিজেনদের উত্তর, মোটেও না। বরং অনেক মহিলা এরকম কাজের জায়গা পছন্দ নাই-ই করতে পারেন। সেক্ষেত্রে, যদি ক্রেতার ব্যবহারের প্রতিবাদ করেন কেউ, তবে মহিলা কর্মী হয়তো হেনস্তার মুখেও পড়তে পারেন। তা ছাড়া পণ্য বিক্রির জন্য নারীকে এগিয়ে দেওয়া বা উইমেন অবজেক্টিফিকেশনের যে অভিযোগ বরাবর ওঠে, এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নেটিজেনদের দাবি, খাবার নয়, যেন সংস্থার মহিলা কর্মীর সঙ্গে প্রেমটাই বাড়তি পাওনা। এমনটাই তো বলতে চাওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপনে। কিন্তু তা হবেই বা কেন! কেন একজন কর্মীর প্রেম-অনুভূতিকে হাতিয়ার করে তবেই হবে পণ্যের বিপণন!
আরও শুনুন: পাতাললোকে রাত্রিবাস! মাটির নীচেই ঝাঁ চকচকে হোটেল, কৌতূহলে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ
সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপনটি নেটদুনিয়ায় সাড়া ফেলেছে যথেষ্ট। তবে প্রশংসা পাওয়ার বদলে সমালোচিত হচ্ছেই বেশি। সত্যিই কি প্রেম এত ঠুনকো! খাবারের সঙ্গে তা বাড়তি পাওনা মাত্র! নাকি, জীবনের প্রেমের গল্পগুলো এমনই আচম্বিতে শুরু হয়ে যায় যে আমরা তা ঠাহরও করতে পারি না! এই বিজ্ঞাপন সেই দুরকমের ভাবনাতেই ভাবিয়ে তুলেছে নেটিজেনদের।