জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। আশেপাশে জনপ্রাণীর দেখা না পাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। বরং ধর্মের টানে সেই জাগ্রত আগ্নেয়গিরিতেই আহুতি দিতে হাজির হন হাজার হাজার ভক্ত। তাও আবার সাধারণ কোনও আহুতি নয়। অগ্নিদেবের উদ্দেশে জীবন্ত পশু নিবেদন করেন তাঁরা। কোথায় রয়েছে এমন আগ্নেয়গিরি? আসুন শুনে নিই।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। কিন্তু বিশ্বাসের জোরে এমন কাজও যে কেউ করতে পারেন তা এই ঘটনা না দেখলে বোঝা মুশকিল। শতাব্দী প্রাচীন এক ধর্মীয় রীতি। যা পালন করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাগ্রত আগ্নেয়গিরির পাশে হাজির হন হাজার হাজার ভক্ত। তারপর সেই আগ্নেয়গিরিতে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী আহুতি দেন তাঁরা।
আরও শুনুন: দু’মাস ধরে প্রতিদিন ৪০ কোটি! মহিলার রোজগার দেখে চোখ কপালে নেটদুনিয়ায়
মাউন্ট ব্রোমো। ইন্দোনেশিয়ার এক জনপ্রিয় আগ্নেয়গিরি। যা পুরোপুরি সুপ্ত নয়। বছরভর সেখান থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। কখন ভয়ানক রূপে তা জেগে উঠবে বোঝা মুশকিল। কিন্তু এই আগ্নেয়গিরিকে এতটুকু ভয় পান না স্থানীয় লোকজন। আশেপাশে গ্রামবাসী একে দেবতা জ্ঞানেই পুজো করেন। আর সেই পুজোর নিমিত্তেই দীর্ঘদিন ধরে এক অদ্ভুত নিয়ম পালন করে আসছেন তাঁরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের একটা সময় হাজার হাজার গ্রামবাসী হাজির হন আগ্নেয়গিরি পাদদেশে। তারপর খাড়াই পথ বেয়ে তাঁরা উঠতে থাকেন উপরের দিকে। সেইসময় ওই অঞ্চল সম্পূর্ণ ভাবে ধোঁয়ায় ঢাকা থাকে। কিন্তু তাতেও কোনও সমস্যা হয় না ওই গ্রামবাসীর। বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে তাঁরা পাহাড়ের উপর উঠতে থাকেন। বিভিন্ন সবজি, ফল থেকে আরম্ভ করে গবাদি পশুও তাঁদের সঙ্গে থাকে। যার সবই আগ্নেয়গিরির অন্দরে আহুতি দেন তাঁরা। স্থানীয় বিশ্বাস, ঈশ্বরের উদ্দেশে এতটুকু দান করলে তা দ্বিগুণ হয়ে ফেরত আসবে। সেইসঙ্গে সারাবছর বিভিন্ন বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন তাঁরা। তাই নির্দ্বিধায় সব কিছু আহুতি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন তাঁরা।
আরও শুনুন: হু হু করে বিকোচ্ছে কন্ডোম! স্রেফ সঙ্গমের নেশা নাকি নেপথ্যে অন্য কারণে?
স্থানীয় ভাষায় এর নাম ইয়াদনা কসাদা। মনে করা হয়, এই প্রথার জন্ম পঞ্চদশ শতকে। স্থানীয় এক লোকশ্রুতিও রয়েছে এই উৎসবকে ঘিরে। কোনও এক রাজা তাঁর প্রথম সন্তানকে আগ্নেয়গিরিতে আহুতি দেওয়ার পর, ২৫ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই থেকে স্থানীয় টাঙ্গার (Tengger) সম্প্রদায়ের মানুষজন নিষ্ঠা ভরে এই নিয়ম পালন করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আশেপাশের গ্রামবাসীরাও।তাঁরা যদিও পুজোয় অংশ নেন না। অনেক সময় আহুতি না দিয়ে তাঁদেরকেই জীবন্ত পশু বা ফলমূল দান করেন ওই সম্প্রদায়ের মানুষজন। তবে আহুতি দেওয়ার ক্ষেত্রে জীবন্ত পশুদান, কোনও অপরাধ মনে করেন না তাঁরা। তাঁদের ধারণা এইভাবে অতিরিক্ত পন্য দেবতাকে দান করেন তাঁরা। সারাবছর তাঁর দয়াতেই বেঁচে থাকেন। তাই বছরে একবার তাঁর উদ্দেশে এই সামান্য দান। এতে অপরাধের কিছু নেই। তবে এই প্রথাকে ভয়ংকর হিসেবেই চিহ্নিত করেছে নেটদুনিয়া। অনেকের কাছেই এভাবে জীবন্ত পশু হত্যা অমানবিক মনে হয়েছে। তবে সবসময় যে পশু আহুতি দেওয়া হয় তা নয়। অনেক সময় ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে ওই অঞ্চলে পশুগুলো ছেড়ে চলে আসেন টাঙ্গার সম্প্রদায়ের মানুষজন। তবে সেক্ষেত্রেও ওই পশুর বাঁচার আশঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদি না অন্য কেউ সেই পশুটিকে নিয়ে চলে আসে। এছাড়া স্রেফ টাকার বান্ডিলও আহুতি দেন অনেকেই। তাঁরা মনে করেন যে পরিমান টাকা আহুতি দেওয়া হচ্ছে তা দশগুণ হয়ে ফেরত আসবে। তাই মনের বিশ্বাসে হাজারও ভক্ত প্রতি বছর ভিড় জমান এই আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে।