বিয়ে ভাঙতে রাজি, তবে বিনিময়ে বিক্রি করা হবে স্ত্রীকে। এমনই এক অদ্ভুত প্রথা এখনও জারি রয়ে গিয়েছে রাজস্থানের একাধিক গ্রামে। যেখানে একরকম ভাবে নিলামে চড়ানো হয় বিবাহিতা মহিলাদের। কী এই প্রথা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিয়ের বাজারে মেয়েদের নিজস্ব মতামতকে এখনও স্বীকৃতি দেওয়া হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। আর সেই কথাকেই যেন প্রমাণ করে দেয় রাজস্থানের এই পুরনো প্রথা। যতই পুরনো হোক না কেন, এখনও অনেক জায়গাতেই দিব্যি বহাল রয়েছে এই প্রথা, যার পোশাকি নাম ‘নাতা প্রথা’। যে প্রথাটি একদিকে আধুনিক, তা দুজন মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই লিভ ইনের অধিকার দেয়। আরেকদিকে এই প্রথাই কার্যত মেয়েদের নিলামে তুলে তার দাম ঠিক করে। কী, দুয়ের মধ্যে কোনও মিল পাচ্ছেন না? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: লোকে কী ভাববে! আর ভাবছেন না ভারতীয় মহিলারা, সিঙ্গল থেকেই খুঁজে নিচ্ছেন সুখ
আসলে এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা মনে করেন, কোনও বিবাহিত পুরুষ বা বিবাহিতা মহিলা বিয়ের বাইরেও একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন। সেক্ষেত্রে ওই মহিলা তাঁর আগের সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে নতুন প্রেমিকের সঙ্গে সহবাসে থাকতে পারেন। আর সেই সহবাসের অনুমোদন দেওয়ার জন্যেই এই নাতা প্রথার উৎপত্তি। কিন্তু সমস্যা এখানেই যে, এই প্রথা মেনে সহবাসের সম্পর্কটিতে যাওয়ার আগে একটি শর্ত থাকে। তা হল, ওই মহিলার স্বামীকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হয় মহিলার প্রেমিককে। হ্যাঁ, বিয়ে ভাঙতে আপত্তি না থাকলেও, টাকার বিনিময়েই স্ত্রীকে ছাড়তে রাজি হন মহিলার স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আসলে পরে আবার বিয়ে করতে চাইলে, নতুন বউকেও যে টাকা দিতে হবে এই ব্যক্তিকে। তাই সেই বউ কেনার ক্ষেত্রেই কাজে লেগে যায় ওই টাকা। তবে বিচ্ছেদের সেই টাকার অঙ্কটি রীতিমতো আলাপ আলোচনা করে ঠিক করে গ্রাম পঞ্চায়েত। এই টাকার পরিমাণ কয়েক হাজার থেকে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ মেয়েটির দাম কত হবে, একরকম ভাবে তারই দর কষাকষি চলে, যা কোনও মেয়ের পক্ষেই বিশেষ সম্মানের নয়।
আরও শুনুন: চাকরি নয়, স্বনির্ভর ব্যবসার পথেই নারীর যোগদান বাড়ছে দেশের শ্রমশক্তিতে, জানাল সমীক্ষা
আসলে রাজস্থান মানেই তো কেবল রানি পদ্মাবতীর মহিমার কাহিনি নয়। নারীর প্রতি এই রাজ্যের সামগ্রিক মনোভাবের ছবিটা দেখলে দেখা যাবে, সেখানে রয়েছে কন্যাভ্রূণ হত্যা আর নারীকে অবাঞ্ছিত মনে করার দীর্ঘ ইতিহাস। আর তার জেরেই এখানে পুরুষ আর নারীর সংখ্যার অনুপাত বিচার করলে বিস্মিত হতে হয়। পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা এতটাই কম যে সব পুরুষের সহজে বিয়ে করার জন্য পাত্রী জোটে না। যে কারণে এখানে চালু রয়েছে ‘আতা সাতা’ প্রথা, যেখানে কনের দাদার সঙ্গেই বিয়ে দিতে হয় বরের বোনকে, সে দুজনের মধ্যে যতই অমিল থাকুক না কেন। হয়তো সেই কারণেই এই নাতা প্রথারও উদ্ভব। শোনা যায়, বিধবা মহিলারাও এই পদ্ধতিতে কোনও পুরুষের সঙ্গে একসঙ্গে থেকে যেতে পারেন। কেউ কেউ বলেন, কেবল রাজস্থানেই নয়, গোটা দেশেরই কোনও কোনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে, বিশেষ করে অনেক উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রথা এখনও চলছেই। কিন্তু যা নারী পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্কের একটি দিগন্ত খুলে দিতে পারত, তাও শেষ পর্যন্ত পথ হারিয়েছে সেই পিতৃতন্ত্রের বাঁকেই। কোনও মহিলা নতুন জীবন শুরু করতে চাইলে তা আদতে তাঁর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে না, নির্ভর করছে তাঁর স্বামী এবং পঞ্চায়েতের অনুমতির উপর। অর্থাৎ নারীকে পুরুষের সম্পত্তি ভাবার যে চল, সেই ভাবনাকেই জিইয়ে রেখেছে এই প্রথাও।