ধর্মপরিচয়ে মুসলিম। কিন্তু মূর্তি গড়তে বড় ভালোবাসেন। প্রতিবছর গণেশ পুজোর আগে লেগে পড়েন ঠাকুর গড়ার কাজে। তবে স্রেফ শখের বশে মূর্তি তৈরি নয়, এই সময় মেনে চলেন কঠিন নিয়মও। টানা ৬ মাস ছুঁয়েও দেখেন না আমিষ। এমনকি ইদের দিনেও তিনি সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবার খান। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
ধর্মীয় বিশ্বাস আলাদা। প্রার্থনার ধরনও ভিন্ন। মূর্তি পুজোর কোনও নিয়ম নেই তাঁর সম্প্রদায়ে। তবু মূর্তি গড়তে বড় ভালোবাসেন গুজরাটের সেলিম শেখ। আর শুধু মূর্তি গড়াই নয়, এই সময়টা সম্পূর্ণভাবে আমিষ খাওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। দীর্ঘ ছয় মাস নিরামিষ খেয়েই যত্ন নিয়ে তৈরি করেন গণেশ মূর্তি।
আরও শুনুন: সিদ্ধিদাতার মহিমা! হিন্দু-মুসলমানকে এক সুতোয় বেঁধে রাখেন লালবাগের রাজা
মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা। স্বাভাবিক ভাবেই এমন কারও পক্ষে, ঈশ্বর বলতে কোনও মূর্তিকে কল্পনা করা কঠিন। তবে গুজরাটের সেলিমের পরিস্থিতি ঠিক তেমন নয়। মুসলিম হয়েও তিনি স্বচ্ছন্দ্যে গণেশ মূর্তি তৈরি করেন। যদিও মূর্তি গড়া তাঁর পেশা নয়। বহুবছর ধরে এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন তিনি। মূলত ওয়েল্ডিং-এর কাজ। তবে লোহা দিয়ে কোনও জিনিস তৈরির ক্ষেত্রেও সেলিম সিদ্ধহস্ত। তবে এর পাশাপাশি মূর্তি গড়াতেও তাঁর বেশ আগ্রহ রয়েছে। যেহেতু গণেশপুজো তাঁর এলেকার সবথেকে জনপ্রিয় উৎসব তাই বিগত কয়েক বছর ধরে গণেশ মূর্তি তৈরি করছেন সেলিম। শুরুটা বছর চারেক আগে। সেই সময় স্থানীয় এক মৃৎশিল্পী সঙ্গে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করেন তিনি। সম্পূর্ণভাবে তৈরি না করলেও মূর্তি তৈরিতে সবরকম সাহায্য করতেন সেলিম। সেই ধারা বজায় রয়েছে এখনও। চলতি বছরেও তিনি একইভাবে গণেশ মূর্তি তৈরি করেছেন। দিনের বেলায় কাজ আর রাতে বাড়ি ফিরে মূর্তি তৈরি। যেহেতু বড় বড় মূর্তি তাই এই কাজ শুরু হয়ে যায় মাস ছয়েক আগে থেকেই। তবে এখানেই রয়েছে চমক। মূর্তি তৈরি শুরু হলেই আমিষ খাওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেন সেলিম। যতদিন না সেই মূর্তি মন্ডপের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে ততদিন এই অভ্যাস বজায় রাখেন সেলিম।
আরও শুনুন: ফুলেরও আছে নিজস্ব ভাষা, লাল গোলাপ কেন ভালবাসার কথা বলে জানেন?
আর এতে কোনও আপত্তি নেই তাঁর পরিবারেরও। সকলেই হাসিমুখে সেলিমের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। এমনিতেই এই অভ্যাস দেখা যায় বিভিন্ন মৃৎশিল্পীদের মধ্যেই। অনেকেই মূর্তির চোখ আঁকার আগে স্নান করে পরিষ্কার কাপড় জামা পরে নেন। নিরামিষ খাওয়া তো আছেই। তবে ভিনধর্মের কারও পক্ষেও যে সেই নিয়ম মানা সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়েছেন সেলিম। এমনকি এর মাঝে ইদ পরলেও তিনি আমিষ খান না। তাঁর কথায়, আমিষ খেতে বিশেষ পছন্দই করেন না তিনি। সেইসঙ্গে মূর্তি তৈরির যাবতীয় সংস্কারে কথা তাঁর ভাবনাতে চলে আসে। সবমিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত। আর এই অভ্যাসের জেরে তাঁর মনের শান্তি হয় বলেও দাবি বছর ৫৭-র সেলিমের। তবে এই ঘটনা যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বিরাট উদাহরণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।