সংকটে পরিবেশ। তারই সঙ্গে ঘোর সংকটে মানুষও। অথচ পরিবেশ বিপন্ন হলে যে তার বেঁচে থাকাও মুশকিল, সে কথা শোনে কে! পরিবেশকে বাঁচাতে তাই এবার ধর্মকেই হাতিয়ার মুসলিম গোষ্ঠীর।
ধর্মের নামে নিষেধাজ্ঞা জারি। ইসলাম ধর্মে এমন প্রবণতা রয়েছে বটে। আর ধর্মের নামে নির্দেশ, প্রাণ দিয়েও রক্ষা করতে চান ধর্মবিশ্বাসীরা। মুসলিমরা যেমন ফতোয়া মান্য করেন, তেমনই ধর্মের বিধানকে বেদবাক্য বলে মানেন হিন্দুরাও। আর এমনিতে যেসব নির্দেশ অনেকেই মানেন না, কিংবা মানতে চান না, ধর্মের ছোঁয়া লাগলে সেই নির্দেশকেই প্রাণপণে গুরুত্ব দেন তাঁরা। আর এই ধর্মবিশ্বাসকে হাতিয়ার করেই এবার পরিবেশ বাঁচাতে কোমর বাঁধলেন মুসলিমদের এক অংশ।
আরও শুনুন:
বন জ্বলছে, বনকর্মীরা ভোটের ডিউটিতে! পরিবেশ বাজি রেখেও চাই নির্বাচন?
কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজকর্মে পরিবেশের হাল যে আমরা দীর্ঘদিনই বেহাল করে তুলেছি, সে কথা তো আর নতুন নয়। একাধিকবার ভূমিধস, হড়পা বান সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের আগুন গরমের জেরেও সে কথা উঠে আসছে বারবার। কিন্তু সেই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও, হাজার হাজার গাছ কেটে প্রকৃতির সবুজ আচ্ছাদনকে আরও অনেকটা ছিঁড়ে দিতে পিছপা নই আমরা। একইসঙ্গে নানাভাবে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতেও আমাদের জুড়ি মেলা ভার। সেই দূষণে একটা বড় অংশ যোগ হয় কোনও কিছু পোড়ানোর ফলে। একইসঙ্গে অক্সিজেন খরচ করে এবং কার্বন গ্যাসগুলি বাড়িয়ে নিশ্বাস নেওয়ার মতো প্রাণবায়ুকে আমরা আরও খানিক সংক্ষিপ্ত করে আনি। সেই প্রবণতাতেই এবার রাশ টানতে চায় লখনউ-এর ইসলামিক সেন্টার অফ ইন্ডিয়া। তাদের পক্ষ থেকে ফতোয়া জারি করা হয়েছে, গাছ কাটা চলবে না, বন্ধ করতে হবে শস্য পোড়ানোর অভ্যেসও। এই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মৌলানা খালিদ রশিদ জানিয়েছেন, কোরান মুসলিমদের নির্দেশ দেয় সবুজ রক্ষা ক্রয়ার জন্য। একইসঙ্গে জল সংরক্ষণ করা, বর্জ্য না বাড়ানোকেও দেখে ধর্মীয় কাজ হিসেবেই। তাই বিশ্ব উষ্ণায়নের বিষময় ফলের কথা ভেবেই এহেন ফতোয়া জারি করেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন:
ধর্মের নামে কাটা পড়বে লক্ষ গাছ! তাপে পুড়লেও যোগীরাজ্য বোঝাল, পরিবেশ ফেলনাই
বাস্তবে দেখা যায়, ধর্মের কাছে সকলেই ভারি তুচ্ছ হয়ে যেতে পারে সময়ে সময়ে। ধর্মের পথ গড়তে নিমেষে ধ্বংস করে দেওয়া চলে যা কিছু। সে ধ্বংস যত বড় বিপদই ডেকে আনুক না কেন! এই যেমন সম্প্রতিই উত্তরপ্রদেশে শোনা গিয়েছিল, কেবল তীর্থযাত্রীদের যাত্রাপথ তৈরি করতেই প্রায় লাখখানেক পূর্ণবয়স্ক গাছ কেটে ফেলার কথা ভাবা হচ্ছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মুছে যাবে এক বিরাট অংশের সবুজ, আরও খানিক রুগ্ন হবে এ দেশ তথা বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে সেই উত্তরপ্রদেশেই অভিনব উদ্যোগ নিতে দেখা গেল মুসলিম গোষ্ঠীটিকে। যা মান্যতা পেলে খানিক হলেও সবুজ বাঁচবে। এই জ্বলন্ত বিশ্বে তাই বা কম কী!