মাত্র একটি হাইফেন, তারই দাম নাকি প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা! পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দামি হাইফেন বলা হয় তাকেই। কিন্তু কী এমন বিশেষত্ব ছিল এর? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হাইফেন, মানে নিছকই সাধারণ একটি যতিচিহ্ন। ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকা কোনও জিনিসই নয়। এতই সাধারণ যে, বাক্যে বিশেষ গুরুত্বও নেই তার। তাকে পাত্তা না দিলেও ভাব প্রকাশের কাজ চলে যায় দিব্যি। কিন্তু কখনও কখনও সেইসব অবহেলার উলটোদিকে দাঁড়িয়ে বিপুল গুরুত্ব কেড়ে নিতে পারে সেই হাইফেনই। যেমনটা ঘটেছিল এক্ষেত্রে। একটি হাইফেনের দাম গিয়ে ঠেকেছিল আকাশছোঁয়া মূল্যে, প্রায় ৮ কোটি মার্কিন ডলার, ভারতের বর্তমান হিসেবে প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা। বছর ষাট আগে এমনই এক আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল দুনিয়া।
ভাবছেন, কী ঘটেছিল তখন? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন:
মিথ্যে হোক, তবু যে সব ছবি অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন দেখায়
সেটা ১৯৬২ সাল। মহাকাশ অভিযান নিয়ে বিশ্বের বড় বড় দেশ তখন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেই সময়েই আমেরিকা সিদ্ধান্ত নেয়, বুধ, শুক্র এবং মঙ্গল, তিনটি গ্রহের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে মহাকাশে পাঠানো হবে ১০টি স্পেস-প্রোব। যার নাম দেওয়া হয়েছিল মেরিনার স্পেস প্রোগ্রাম। প্রথমেই শুক্র গ্রহের উদ্দেশে যান পাঠানো হবে, সবকিছুই প্রস্তুত, উৎক্ষেপণও সফল হল, কিন্তু তারপরেই ঘটল বিপত্তি। নাসার বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, রকেট আদৌ ঠিক পথে যাচ্ছে না। বরং সে আবার ফিরে আসতে চলেছে পৃথিবীর দিকেই। এ তো ভয়ানক বিপদ! বাধ্য হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয় বিজ্ঞানীদের। এতদিনের টানা গবেষণার শেষে যে রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, তাকে নিজেদের হাতেই ধ্বংস করে ফেলতে বাধ্য হন তাঁরা। হ্যাঁ, মহাকাশেই। উড়ান নেওয়ার মাত্র ২৯৩ সেকেন্ডের মধ্যেই ছাই হয়ে যায় এই ভেনাস প্রোব। এই ব্যর্থ অভিযানের দরুনই সে সময়ে প্রায় ৮ কোটি মার্কিন ডলার খুইয়েছিল নাসা। আর এই যাবতীয় ব্যর্থতার নেপথ্যে ছিল একটিমাত্র হাইফেন। তদন্তে জানা যায়, রকেট উৎক্ষেপণের সমস্ত অঙ্ক কষা হয়েছিল খাতায় কলমেই। পরে হাতে লেখা সেই প্রোগ্রামিং-এর ডিজিটাল প্রতিলিপি প্রস্তুত করেন টাইপরাইটাররা। যা সরাসরি সুপার কম্পিউটারে আপলোড করা হয়। এই গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে কখন যেন ভুল হয়ে গিয়েছিল। ‘আর এন ডট’ নামে বিশেষ একটি গাণিতিক অপারেটরের মাথায় একটি হাইফেন থাকার কথা ছিল। অবশ্য সাধারণের চোখে তা হাইফেন বলে মনে হলেও, অঙ্কের ভাষায় তার নাম ওভারবার। এই ওভারবার দিতে ভুল হওয়ার কারণেই বদলে যায় মহাকাশযানটির কক্ষপথের ব্যাসার্ধ। ফলে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
আরও শুনুন:
কখনও হেরে গিয়েও জেতা যায়! বড়দের বোঝাল খুদের দল
বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত হয়ে আছে এই ‘মেরিনার ট্র্যাজেডি’। আর তার সঙ্গেই জুড়ে আছে ওই হাইফেনটিও। যার জন্য ৬৬৭ কোটি টাকা নষ্ট হয়েছিল মুহূর্তে। সেই কারণেই একে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে দামি হাইফেন’-এর তকমা দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক আর্থার সি ক্লার্ক।