দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে শোনা গিয়েছে নারীসুরক্ষার কথা। অথচ সেই মোদির ভারতে কতটা সুরক্ষিত কন্যাভ্রূণেরা। সম্প্রতি মার্কিন একটি সমীক্ষার রিপোর্ট তুলে দিয়েছে সেই প্রশ্নই। কন্যাভ্রূণ হত্যার নিরিখে এগিয়ে দেশের হিন্দুরা। চাঞ্চল্যকর তথ্য ধরা পড়েছে সমীক্ষায়। আর কী জানা গিয়েছে সেই রিপোর্টে? আসুন, শুনে নিই।
কন্যাভ্রূণ হত্যার নিরিখে নাকি মুসলিমদের পিছনে ফেলে শীর্ষে হিন্দু সমাজ। মার্কিন এই সমীক্ষা দেশের পক্ষে রীতিমতো অস্বস্তিকর, বলছে বিশেষজ্ঞমহল।
‘বেটিয়া পরায়া ধন’। ‘কন্যাসন্তান এমন একধরনের বিনিয়োগ, যার আদতে কোনও ফেরত নেই।’ -এমনই হাজার প্রচলিত ধারণার তলায় আজও চাপা পড়ে যায় কন্যাসন্তানরা। কিছুদিন আগেই মাটির তলা থেকে এক সদ্যজাত কন্যাসন্তানকে খুঁজে পেয়েছিলেন এক কৃষক। আজও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ এক অপ্রিয় সত্য। বংশরক্ষার তাগিদে কেবল পুত্রসন্তানই কামনা করেন, এমন পরিবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় সর্বত্র। আর এমন ঘটনা নাকি বেশি ঘটছে হিন্দু পরিবারগুলিতেই। তেমনটাই বলছে সমীক্ষা।
আরও শুনুন: ‘বেটি’ বাঁচাতে শিবের সঙ্গে নিতে হবে সেলফি, মন্ত্রীর নির্দেশ ঘিরে হইচই উত্তরাখণ্ডে
সম্প্রতি পিউ রিসার্চ সেন্টার নামে ওয়াশিংটনের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষা চালায়। কেন্দ্রীয় সরকারের করা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের থেকে শেষ তিন রাউন্ডের তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকরা। আর গোটা গবেষণার শেষে ধরা পড়েছে এই বিস্ফোরক তথ্য। সেখানে দেখা গিয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে অন্তত ৯০ লক্ষ কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে। এককথায় বলতে গেলে যা উত্তরাখণ্ড রাজ্যের মোট জনসংখ্যার চাইতে সামান্যই কম।
যদিও জন্মের আগে মেডিক্যাল পদ্ধতিতে লিঙ্গনির্ধারণ এ দেশে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ভারতীয় সংবিধানে কঠোর আইনও রয়েছে এ নিয়ে। তবে তা সত্ত্বেও আইনের ফাঁক গলে এ দেশে হামেশাই চলে সেই কাজ। প্রশাসন কার্যত নির্বিকার।
সাম্প্রতিক কালে বারবার দেশ জুড়ে ছড়িয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিষবাষ্প। কথায় কথায় উঠছে হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গ। আজকের ভারতে দাঁড়িয়ে কার গুরুত্ব কত, তা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে সব পক্ষ। সংখ্যালঘু সমাজে এ সব প্রথা বেশি বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। তবে সেই ধারণাকে ভেঙেচুরে দিয়েছে সাম্প্রতিক এই সমীক্ষা। দেখা যাচ্ছে, কন্যাভ্রূণ হত্যার নিরিখে এগিয়ে হিন্দুরা। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭৯.৮ শতাংশ হিন্দু। তার মধ্যে ৮৬.৭ শতাংশ কন্যাসন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায় না। সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৭৮ লক্ষ কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয় হিন্দু পরিবার থেকে। শিখ পরিবার থেকে মৃত্যু হয় অন্তত ৪.৪ লক্ষ মেয়ের। মুসলিম সমাজে ভ্রূণহত্যার ঘটনা ৫.৯ লক্ষের কাছাকাছি।
আরও শুনুন: সদ্যোজাত কন্যাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হল মাটিতে , ‘বেটি বঁচাও’-এর উল্টো পথেই কি হাঁটছে দেশ?
সামগ্রীক ভাবে এ ব্যাপারে দেশের অবস্থা বেশ সঙ্গিন। এর ফলে ক্রমশ ভারসাম্য হারাচ্ছে এ দেশে পুত্র-কন্যা জন্মের অনুপাত। যা যথেষ্ট উদ্বেগের। কিছুদিন আগেই নিজের রাজ্যে নারী-পুরুষ জন্মের অনুপাতে ভারসাম্য আনতে শিবের সঙ্গে সেলফি তোলার নিদান দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের এক মন্ত্রী। সে নিয়ে বিস্তর হইচইও হয়েছিল। সরকারি তরফে কন্যা বাঁচাতে হাজার রকম প্রকল্প ও উদ্যোগ সত্ত্বেও যে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আদতে চাই তৃণমূল স্তর থেকে সচেতনতা। তবেই বোধহয় সম্ভব হবে ‘বেটি বঁচাও বেটি পড়াও’-এর মতো প্রকল্পের বাস্তবায়ণ।