সাদা গাউনের উপর লাল সুতোয় নকশি কাঁথার কারুকাজ, আর উন্মুক্ত পিঠ জুড়ে আঁকিবুঁকি করা নকশি কাঁথার গল্প। ফিল্মফেয়ারের রেড কার্পেটে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতিকেই সঙ্গী করেছিলেন অভিনেত্রী মনামী ঘোষ। তবে যে ভাবনাটি সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠতে পারত, সেখানেই কিনা রয়ে গেল কয়েকটি বানান ভুল?
খোলা পিঠ জুড়ে সাজানো অক্ষর। বাংলা অক্ষর। বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতিকে সঙ্গী করেই ফিল্মফেয়ারের লাল গালিচায় আগুন ঝরালেন অভিনেত্রী মনামী ঘোষ। সচরাচর বিনোদুনিয়ার এহেন অনুষ্ঠানগুলিতে পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাকের রমরমাই দেখা যায়। কিন্তু সেখানেই পাশ্চাত্যের সঙ্গে ঐতিহ্যের মিশেলে ফ্যাশনের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করলেন অভিনেত্রী। বাংলার প্রবাদে, গল্প, গানে কিংবা কবিতায় অমর হয়ে আছে যে নকশি কাঁথা, বাংলার সেই লোকসংস্কৃতিকেই তিনি সাদরে তুলে আনলেন এই বড় পরিসরে। সাদা গাউনের উপর লাল সুতোয় নকশি কাঁথার কারুকাজ, আর উন্মুক্ত পিঠ জুড়ে আঁকিবুঁকি করা নকশি কাঁথার গল্প। যেখানে লেখা- “অটুট সেই না বলা কথা, মনের আবেগের জমানো ব্যথা, আঁকে আর লিখে শোকগাথা, কত স্বপ্ন দিয়ে বোনে নকশি কাঁথা…।” বাংলাদেশের কবি ইব্রাহিম আরাফাতের লেখা এই পঙ্ক্তিগুলি দিয়েই বাংলার নকশি কাঁথার ঐতিহ্যকে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী।
আরও শুনুন:
নারীশরীর দেখা গেলে আপত্তি, ঢাকলেও প্রশ্ন! ভাবালেন পরিণীতি
ভিক্টোরিয়ান স্টাইলের গাউনের সঙ্গে এহেন লেখার যুগলবন্দিতে তারকার অভিনব সাজ সকলের নজর কেড়েছে বটে। কিন্তু নজর করলে দেখা যাচ্ছে, সেই লেখার মধ্যেই রয়ে গিয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট বানানের ভুল। যেমন ‘ব্যথা’ শব্দে ব-এ য-ফলার পরে বাড়তি আ-কার লেখা হয়েছে। আবার গীত অর্থে যে গাথা শব্দটি, সেখানেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে চন্দ্রবিন্দু। এমনিতে বাংলা ভাষা ও তার বানানের প্রতি একরকমের অবহেলা সাম্প্রতিক কালে বারে বারেই চোখে পড়ে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বা বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় বানানে ভুল রয়ে গিয়েছে। তা নিয়ে হয়তো খানিক চর্চাও হয়, সোশাল মিডিয়ার স্ক্রিনশট সংস্কৃতিতে খানিক বিতর্ক উসকে ওঠে, আবার থিতিয়েও যায়। কিন্তু কথা হচ্ছে, যে কোনও ভাষার ক্ষেত্রেই তা নির্ভুল লেখা বা বলার প্রতি মনোযোগী হওয়াটাই তো কাম্য। ইংরেজির ক্ষেত্রে কোনও বানান ভুল হলে যদি আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, তবে মাতৃভাষার ক্ষেত্রেও সে বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত বইকি।
আরও শুনুন:
মন্তব্যে অনড় কঙ্গনা, তবে চাইলেই কি কাউকে ‘পর্নস্টার’ বলা যায়?
এমনিতে বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি সবকিছুই দিন দিন যে অবহেলার মুখোমুখি হচ্ছে, সেখানে অভিনেত্রীর এই ভাবনাটি নিঃসন্দেহে সাধুবাদের দাবি রাখে। এই প্রথম তো নয়, এর আগেও কখনও ঢাকাই জামদানি ড্রেসে, কখনও বা চট দিয়ে তৈরি পোশাকে সকলের নজর কেড়েছেন তিনি। এবারও ভিন্টেজ শ্যানেল গাউন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভেবেছিলেন, ওয়েস্টার্ন গাউনের উপর কীভাবে বাংলার কারুশিল্পকে তুলে ধরা যায়। এই পোশাকের কনসেপ্ট ও আইডিয়া পুরোটাই তাঁরই। এমনকি সেকালের বাংলার মা-ঠাকুমারা যেভাবে মাথায় তেল লাগিয়ে চুল বেঁধে দিতেন, তেমনই ধাঁচে কেশসজ্জাও করেছিলেন। সব মিলিয়ে, এহেন পরিসরে বাংলার সংস্কৃতিতে নতুনভাবে তুলে ধরার বিষয়টিই ছিল অভিনব। তবে যে ভাবনাটি সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠতে পারত, এই বানান ভুলটুকুর কারণে সেখানে কিন্তু খানিক ত্রুটি রয়েই গেল।