নানাভাবে হেনস্তাই কর্মক্ষেত্রের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী সেই পরিস্থিতিই। কাজের জগতের হেনস্তাকে দায়ী করে চিঠিতে আক্ষেপ করলেন মা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কাজের জগতে যে নানাভাবে হয়রানির মুখোমুখি পড়তে হয় মেয়েদের, সে কথা এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সকলেরই জানা। বিশেষ করে এক চিকিৎসক তরুণী যখন নিজেরই কর্মক্ষেত্রে নাইট ডিউটি দেওয়ার সময় ধর্ষিতা হলেন, খুন হলেন, সেই পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রের হেনস্তার কথা উঠে আসছে আরও বেশি করে। নানারকম পেশায় মেয়েদের কী কী ভাবে সমস্যায় পড়তে হয়, শারীরিক এবং মানসিক উভয় ভাবেই, সে কথা নিয়ে মুখ খুলছেন তাঁরা। আর এই আবহেই এক তরুণীর মৃত্যুর পর সরব হলেন তাঁর মা। দাবি করলেন, কর্মক্ষেত্রের এই সমস্যাজনক পরিস্থিতিই তাঁর মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
বছর ছাব্বিশ বয়সের ওই তরুণী পুনের বাসিন্দা, একটি বহুজাতিক সংস্থার অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসাবে কর্মরতা ছিলেন তিনি। মাস চারেক আগেই ওই সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন। তবে সেই কাজ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আকস্মিকভাবেই মৃত্যু হয় তাঁর। আনা সেবাস্টিয়ান পেরাইল নামের ওই তরুণীর মা এবার চিঠি পাঠিয়েছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষকে। সংস্থাটির ভারতীয় শাখার প্রধান রাজীব মেমানিকে চিঠি দিয়ে অফিসের কর্মসংস্কৃতির দিকেই তোপ দেগেছেন তিনি। তাঁর সাফ বক্তব্য, সংস্থায় মানবাধিকার নিয়ে যেসব কথা বলা হয়, কর্মীদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তার কিছুই আদৌ রক্ষিত হয় না। বরং অতিরিক্ত কাজের চাপ, ইচ্ছেমত চাপ বাড়ানো, কাজের সময় বাড়িয়ে দেওয়া, কিংবা বসের সুবিধা অনুযায়ী দিনে রাতে যে কোনও সময় মিটিং-আলোচনা, এই সবকিছুই কোনও কর্মীর নিজস্ব জীবন সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। অফিসের বাইরের সময়টুকু, বা ছুটির দিনগুলিও সংস্থা নিজের দখলেই রাখতে চায়। সেই সময়েও কর্মীদের উপর ইচ্ছেমত কাজ চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে। আর এই অবস্থাকে হেনস্তা বলেই মনে করছেন তরুণীর মা। তিনি জানাচ্ছেন, একবার রাতে ফোন করে আনাকে একটি কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা পরদিন সকালেই জমা দেওয়ার কথা। বলাই বাহুল্য, সেই নির্দেশ পালন করতে হলে ঘুম বা বিশ্রামকেই বাদ দিতে হয়। উপরন্তু এই বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলেও শুনতে হয়েছিল, এভাবে সকলেই কাজ করে থাকে। সত্যি বলতে, কর্পোরেট দুনিয়ায়, বেসরকারি বা অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলিতে এভাবেই অতিরিক্ত চাপকে স্বাভাবিক বলে দেখানো হয়। মানসিক হেনস্তাকে অগ্রাহ্য করা হয় সহজেই। আর সেই অভ্যাসই অনেককে আরও ভেঙে দেয়, যেমনটা ঘটেছে এই তরুণীর ক্ষেত্রেও।
কর্মক্ষেত্রে হেনস্তা নতুন নয়। সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন হয়রানির শিকার। কেবল যৌন হেনস্তাই হেনস্তা নয়, শারীরিক এবং মানসিক নানাভাবেই হেনস্তা আসতে পারে। যে কর্মক্ষেত্রে দিনের অধিকাংশ সময়ই কাটে, যেখানে জীবনের অনেকটা অংশ জমা পড়ে যায়, তা একরকমের ঘরই হয়ে ওঠার কথা ছিল। অথচ দেখা যাচ্ছে, সেখানেও বিপন্ন হতে হচ্ছে মেয়েদের, বা সামগ্রিকভাবে সকল মানুষকেই। এই তরুণীর মতো অনেকে হারিয়েও যাচ্ছেন তারই ফলে। সেই মৃত্যুতে আমাদের চোখ খুলবে কি?