দেশের সবচেয়ে সুখী রাজ্য কোনটি? সম্প্রতি এমনই খোঁজ চালিয়েছিল এক গবেষক দল। আর সেই সমীক্ষাতেই বাকি রাজ্যগুলিকে পিছনে ফেলে সেরার শিরোপা জিতে নিল উত্তর-পূর্বের রাজ্য মিজোরাম। কেন এই রাজ্যকেই দেশের সবচেয়ে সুখী জায়গা বলে মনে করছেন গবেষকেরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সুখের খোঁজে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন গবেষকেরা। আজ্ঞে হ্যাঁ, শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি। আসলে দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুখী রাজ্য কোনটি, তাই খতিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। আর এই সুখ মেপে নেওয়ার জন্য কয়েকটি মাপকাঠিও ধার্য করেছিলেন তাঁরা। সেইসব সূচকের ভিত্তিতেই দেখা গিয়েছে, দেশের সবচেয়ে সুখী রাজ্যের তকমা পেতে পারে মিজোরাম।
ঠিক কী জানিয়েছেন গবেষকেরা?
আরও শুনুন: নির্দল হিসেবে ভোটে লড়বেন, ১ টাকার কয়েন দিয়ে ১০ হাজার টাকা ফি জমা কর্ণাটকের ব্যক্তির
সম্প্রতি গুরগাঁও-এর ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের তরফে এই সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল। অধ্যাপক রাজেশ কে পিলানিয়ার তত্ত্বাবধানে দেশজুড়ে সমীক্ষা করে একটি গবেষক দল। ছটি মাপকাঠির ভিত্তিতে এই সমীক্ষা করেন গবেষকেরা, যার মধ্যে ছিল- পারিবারিক সম্পর্ক, কাজের পরিবেশ, সামাজিক ঘটনা এবং মানবকল্যাণ, ধর্ম, করোনার প্রভাব এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। আর এই সমস্ত প্যারামিটারের বিচারেই দেখা যায় দেশের অন্যান্য রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটি। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০০ শতাংশ সাক্ষরতার দিকে পৌঁছোনোর নিরিখে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিজোরাম। শুধু তাই নয়, এই রাজ্যটি পড়ুয়াদের উন্নতির দিকে খেয়াল রাখে, এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের সুযোগসুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে। আবার পরিবারের তরফ থেকেও পড়াশোনার জন্য বিপুল চাপ দেওয়া হয় না। জানা গিয়েছে, শিক্ষকরা নিয়মিত পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন, যাতে কোনও সমস্যা হলেও তা সহজে মিটিয়ে ফেলা যায়। পড়ুয়াদের তরফ থেকেও জানা গিয়েছে, শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশেন। ফলে তাঁদের সঙ্গে কোনও কথা ভাগ করে নিতে ভয় পায় না তারা। শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে এমন পরিবেশ যে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে, তা তো বলাই বাহুল্য।
আরও শুনুন: পড়াশোনায় পিএইচডি, অথচ চালাচ্ছেন অটো, যুবকের জীবনের গল্প শুনে হতবাক যাত্রীরা
রিপোর্টটি আরও জানিয়েছে, মিজোরামের সামাজিক পরিস্থিতিও সে রাজ্যের কমবয়সিদের মধ্যে সুখ বজায় রাখে। রাজ্যটিতে জাতপাতের বিভাজন নেই। নেই লিঙ্গবৈষম্যও। উপরন্তু কোনও কাজকেও এখানে নিচু চোখে দেখা হয় না। তাই কম বয়স থেকেই কোনও না কোনও কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে এখানকার ছেলেমেয়েরা। যদিও এ রাজ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার কম নয়। কিন্তু পুরুষ এবং নারী উভয়ই আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার দরুন একজনকে সাধারণত অন্যজনের উপর নির্ভর করতে হয় না। দেখা যায়, গৃহহিংসা কিংবা অসুখী দাম্পত্য সত্ত্বেও স্রেফ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নন বলেই অনেকের সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় থাকে না। কিন্তু এখানে তেমনটা করতে হয় না বলেই খুশি রাজ্যের বাসিন্দারা। আর এই সবকিছু মিলিয়েই মিজোরামকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুখী রাজ্য বলে ঘোষণা করেছেন গবেষকেরা।