মা-রা সব পারে। গল্পে সিনেমায় এর উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। তাই বলে বাস্তবেও কিছু কম নেই। এমনই এক মা মধ্যপ্রদেশের সন্ধ্যা। সন্তানের জন্য কুলিগিরি করতেও তিনি দুবার ভাবেননি। ঠিক কেমন তাঁর জীবনের গল্প? আসুন শুনে নিই।
দূরপাল্লার ট্রেন থেকে নেমেছেন সবে। কিছু বোঝার আগেই ঘিরে ধরলেন কুলির দল। কিন্তু একি, সেই দলে রয়েছেন এক মহিলাও! পুরোদস্তুর কুলির মতোই পোশাক তাঁর গায়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ভিড় খালি হল। অন্যান্য কুলিদের মতো, ওই মহিলাও কাঁধে পিঠে ব্যাগ তুলে নিলেন।
আরও শুনুন: কারাগারে জন্ম কিশোরীর, বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ দিল সেই অভিজ্ঞতাই
অবাক হচ্ছেন তো?
এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের কাটনি জংশনে। বর্তমানে ওই স্টেশনই ঠিকানা বছর ৩০-এর সন্ধ্যা মারাভি (Sandhya Marawi)। জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, তিনিই দেশের প্রথম মহিলা কুলি। তবে এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর, এই পেশা বেছে নিতে হয়েছে তাঁকে। বলাই বাহুল্য, ওই স্টেশনে সন্ধ্যা ছাড়া আর কোনও মহিলা কুলি নেই। যদিও তা নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই সন্ধ্যার। তিনি জানেন, সন্তানকে বড় করতে হলে এই কাজ তাঁকে করতে হবে। সাধারণত কুলি হিসেবে আমরা পুরুষদের দেখতে পাই। সেক্ষেত্রে কোনও মহিলার পক্ষে এই কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে স্রেফ কুলিগিরির জন্যই যে সন্ধ্যার জীবনের লড়াই কঠিন, তা নয়। তাঁকে প্রতিদিন অন্তত ৯০ কিমি পাড়ি দিতে হয় এই কাজের জন্য। বাড়িতে তিন সন্তানকে রেখে সুদূর কুন্দম থেকে ট্রেনে চড়ে জব্বলপুরের স্টেশনে পৌঁছন সন্ধ্যা। সেখান থেকে কাটনি জংশন। প্রায় ৪৫ কিমি দীর্ঘ এই রেলযাত্রা। তারপর সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি। আবার একইভাবে ফিরে আসা। তবু এই কাজ অসৎ নয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই করতে হয় উপার্জন। তাই যতই কষ্ট হোক, প্রতিদিন নিয়ম করে কুলিগিরি করতে তিনি পৌঁছে যান।
আরও শুনুন: হবু বরকেও গ্রেপ্তার, আর কোন অসমসাহসী কাজে নজর কেড়েছিলেন অসমের ‘লেডি সিংহম’?
আর এমনটা তাঁকে করতে হচ্ছে ২০১৭ থেকে। একা মানুষ হলে বিষয়টা হয়তো অন্যরকম হতো। কিন্তু তিন সন্তানকে ফেলে মা কী করে থাকেন! তাঁদের তো মানুষ করতেই হবে। তাই পেশা হিসেবে কুলিগিরি বেছে নিয়েছেন সন্ধ্যা। স্টেশনে ট্রেন থামলেই হুড়োহুড়ি শুরু। সবাই হয়তো বরাত পাবেন না। প্রত্যেকবার ট্রেন থামলেইউ পকেটে কিছু টাকা ঢুকবে না। তখন অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। আর ট্রেন থামলেই রোজগারের আশায় দৌড় শুরু। সন্ধ্যাও সেই ভাবেই কাটাচ্ছেন দিন। মহিলা হয়ে, পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন যুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন একা। তাঁকে দেখে অবাক হন অনেকেই। তাঁর জীবন যুদ্ধকে কুর্নিশও জানান প্রায় সকলেই। তবে সেসব দিয়ে সন্ধ্যার চলবে না, তিনি জানেন ট্রেন থামলে তাঁকে দৌড়ে গিয়ে পিঠে বোঝা তুলে নিতে হবে। তবেই বাড়িতে হাঁড়ি চড়বে। সন্তানের পেট ভরবে।