বেঁচে থাকতে যতটুকু প্রয়োজন, তাতেই সন্তুষ্ট। বাড়তি এতটুকু ভোগ করায় আপত্তি। অন্যদেরও সেই শিক্ষাই দেন। সারাজীবন বিদ্যুতের মুখ না দেখা এই বৃদ্ধার জীবন অবাক করতেই পারে। তার কারণ অবশ্য একটা নয়, অনেকগুলো। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বয়স ৮৩। এতদিনেও বিদ্যুতের প্রয়োজন মনে করেননি। কেরোসিন ল্যাম্পের আলোয় শেষ করেছেন প্রাথমিক থেকে পিএইচডি। একাই থাকেন। রান্না, বাড়ির কাজ, বাগানের যত্ন, সব কিছু একাই করেন। সেইসঙ্গে চলে পড়াশোনোও। রাশি রাশি বইয়ের মাঝে জীবনের সমস্ত সুখ খুঁজে পান এই বৃদ্ধা।
কথা বলছি ড. হেমা সানে সম্পর্কে। পুনের বাসিন্দা। শহরের ঝাঁ চকচকে পরিবেশে নয়। নেহাতই সাধারণ এক ঘরে দিন কাটান ইনি। সেখানে বিদ্যুৎ নেই। টিভি, ফ্রিজ, পাখা, আলো কিছুই নেই। রয়েছে শুধু বই। ভোরবেলায় পাখির আওয়াজে দিন শুরু হয় হেমার। প্রকৃতির মাঝে বেশ খানিকক্ষণ সময় কাটিয়ে ঘরে ফেরেন। নিজে হাত গাছ লাগিয়েছেন অনেক। সেসবের পরিচর্যাও তাঁর রোজের রুটিন। বয়সের ছাপ চেহারায় স্পষ্ট, কিন্তু তাঁর কাজ দেখে বোঝার উপায় নেই। একাই সবটা সামলান। রান্নাও করেন নিজেই। যতটুকু প্রয়োজন ততটাই। বাড়তি কিছু করতে বেজায় আপত্তি তাঁর। কখনও বাড়তি থেকে গেলে, তা পুনরায় ব্যবহার করেন। কোনও কিছুই নষ্ট বা অপচয় হতে দেন না। সারাদিনের কাজ বলতে পড়াশোনা আর লেখালেখি। নতুন কাগজ নেই। তাই পুরনো পাতায় সবসময় লিখে চলেন কিছু না কিছু। মূলত পড়ার বিষয়। কিংবা তাঁর গবেষণা সম্পর্কিত কোনও তথ্য লিখে রাখেন। এইসব লেখা বই আকারেও প্রকাশিত হয়েছে বহুবার। বিভিন্ন কলেজের পাঠ্য হিসেবে তা পড়ানোও হয়। আসলে, এমন জীবনযাপনেই ছোট থেকে অভ্যস্ত ড. হেমা।
তাঁর জন্মের সময় বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেছেন কেরোসিন ল্যাম্পের আলোয়। সেই অভ্যেস সারাজীবন ধরে রেখেছেন। জীবনে বিদ্যুতের চাহিদা অনুভব করেননি কখনও। এভাবে দিন কাটাতে কোনও সমস্যা হয় বলেও মনে করেন না হেমা। তাই অন্যদেরও সেই পাঠ দেন। তাঁর সম্পত্তি বলতে একগুচ্ছ বই আর কয়েকটা শাড়ি। বর্তমানে অবশ্য কেরোসিন ল্যাম্প ব্যবহার করেন না।
সেই জায়গায় সঙ্গে রাখেন একখানা সোলার ল্যাম্প। তাতে যেটুকু আলো, রাতের অন্ধকার কাটে সেটুকুই যথেষ্ট মনে করেন হেমা। ৮৩ বছর এমন জীবন কাটানো মুখের কথা নয়। বিশেষ করে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, যেখানে চারিদিকে বিলাসীতা আর প্রাচুর্য্যের ছড়াছড়ি। সেসবের দিকে না তাকিয়ে নিজের মতো করে সাধারণ জীবন কাটিয়ে চলেছেন হেমা।