মধ্যপ্রদেশের বিপুল আয়তন মাঝে মাঝেই তাঁকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দিত। উঁহু, দেশের নয়, নিজের শরীরের কথাই তাঁর ভাবনার বিষয় ছিল। আসলে বিশাল ভুঁড়ি নিয়ে বরাবরই সকলের হাসির খোরাক হয়েছেন এই মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। গর্ভবতী মহিলার তুলনা টেনে ব্যঙ্গ করা হত তাঁকে। কিন্তু সেই কথাই যে তাঁর জীবনে সত্যি হয়ে যাবে, কে তা জানত! আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ছোটবেলা থেকেই একখানা বড় ভুঁড়ি নিয়ে নাস্তানাবুদ হত ছেলেটি। গ্রামের অন্যান্য সমবয়সি ছেলেরা, এমনকি বড়রাও আকছার এই নিয়ে ঠাট্টাতামাশা জুড়ে দিত। কিন্তু দেখা গেল, কোনোভাবেই এই মেদ কমাতে পারছে না সে। উলটে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভুঁড়িও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। অবশেষে ৩৬ বছর বয়সে একদিন সঞ্জু ভগতের মনে হল, ভুঁড়ির জন্য প্রাণটাই বুঝি যায় এবার! আক্ষরিক অর্থেই, শ্বাস নিতে রীতিমতো কষ্ট বাড়ছিল তাঁর। সঙ্গে বাড়তি পাওনা ছিল যন্ত্রণা। অতএব অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। আর তারপরেই চমক। এমন এক সত্যির মুখোমুখি তাঁকে দাঁড়াতে হল, যার খোঁজ জীবনের তিন-তিনটে দশক পেরিয়ে এসেও না জানাই রয়ে গিয়েছিল তাঁর।
আরও শুনুন: দেশপ্রেমের বার্তা দিতে অভিনব উদ্যোগ, চোখের মধ্যে জাতীয় পতাকা আঁকলেন ব্যক্তি
কী হয়েছিল ঠিক? আসছি সে কথাতেই।
ওই ব্যক্তিকে দেখে চিকিৎসকেরা মনে করেছিলেন, টিউমার রয়েছে তাঁর শরীরে। সুতরাং দ্রুত অপারেশন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারেই প্রথমবার চমকে গিয়েছিলেন ওই চিকিৎসকেরা। অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যেখানে টিউমার থাকার কথা, সেখানে হাত দিয়ে কোনও টিউমার পাওয়া যায়নি। বদলে যেন হাড়ের আভাস মিলেছিল বলে জানান এক চিকিৎসক। আর সে কথাই সত্যি করে ওই ব্যক্তির পেটের ভিতর থেকে ক্রমে ক্রমে বেরিয়ে আসে কয়েকটি অঙ্গযুক্ত এক মানবশরীর। বলা ভাল, শরীরের আদল। কারণ তা সম্পূর্ণভাবে গঠিতই হয়নি। পা, হাঁটু, যৌনাঙ্গ, চোয়াল, খানিক চুল, সব মিলিয়ে যেন এক কদাকার মাংসপিণ্ড ছিল সেটি। কিন্তু সেটিকে বের করার ফলেই ম্যাজিকের মতো ওই ব্যক্তির ব্যথা বেদনা কমে যায়।
আরও শুনুন: কে রাখি পরাবে! ডেটিং অ্যাপে অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে বোন পেল যুবক
সঞ্জু ভগত নামে ওই ব্যক্তির আসলে যা হয়েছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে বলা হয় ফিটাস ইন ফিটু। সোজা কথায় একটি ভ্রূণের মধ্যে আরেকটি ভ্রূণ ঢুকে যাওয়া। এখনও পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মাত্র ৯০টি এই ধরনের কেস পেয়েছেন ডাক্তারেরা। এক্ষেত্রে মায়ের শরীরে যমজ সন্তান থাকলে গর্ভাবস্থাতেই একটি ভ্রূণ আরেকটি ভ্রূণের শরীরের মধ্যে ঢুকে যায়। ফলে ভূমিষ্ঠ হয় দ্বিতীয় ভ্রূণটিই। কিন্তু প্রথমজন পৃথিবীর আলো না দেখলেও তাকে মৃত বলা চলে না। জীবিত ব্যক্তিটির শরীরের মধ্যে থাকা ওই ভ্রূণ রক্তের মাধ্যমে পুষ্টি সংগ্রহ করে কার্যত বেঁচে থাকে। অর্থাৎ কার্যত নিজের সহোদরকেই এতগুলো বছর ধরে শরীরে বয়ে নিয়ে বেরিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তবে, তাঁর ঠিক কী হয়েছিল, অস্ত্রোপচারের পর সেসব নিয়ে আর বিশেষ মাথা ঘামাতে চাননি তিনি। বরং এতদিনের শারীরিক যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পেয়েই নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি।