Flex, Woke, Cancel Culture – শব্দগুলো কি চেনা চেনা লাগছে? না চেনার কথা নয়। তবে, নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা, যাদেরকে আমরা জেন-জেড বলে থাকি, তারা এই শব্দ কোন অর্থে প্রয়োগ করে! তা অবশ্য অনেকের কাছেই অজানা। আসুন শুনে নেওয়া যাক এই প্রজন্মের মুখের ভাষা ঠিক কেমন, আর কী-ই বা তার অর্থ।
সময় বদলায়। পালটে যায় প্রজন্মও। সেই সঙ্গে পরিবর্তন আসে প্রজন্মের ভাষাতেও। অনেকের কাছেই, তা রীতিমতো হায়ারোগ্লিফিক অর্থাৎ বেশ দুর্বোধ্য। আর তাই নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তাল রাখতে পারেন না অপেক্ষাকৃত বয়স্করা। আমরা বলে থাকি, জেনারেশন গ্যাপ। তা অস্বীকার করা যায় না বটে। তবে, প্রজন্মের ভাষা বুঝলে সেই দূরত্ব খানিক কমানো যায় বইকি!
আরও শুনুন: সানগ্লাস চোখে ‘কুল দাদি’, ৮৫ বছরেও মাতাচ্ছেন নেটদুনিয়া, কেন জানেন?
সোশ্যাল মিডিয়া বা মাইক্রো ব্লগিং সাইটের দৌলতে এমনিতেই বদলে গিয়েছে যোগাযোগের ধরন। তার প্রভাব এসে পড়েছে ভাষাতেও। অনেকটা সংক্ষেপিত, সাংকেতিক কথাবার্তায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে এই প্রজন্ম। আর তাই, একটি শব্দের প্রচলিত অর্থও অনেকখানি বদলে যাচ্ছে। যেমন, ধরা যাক ‘ফ্লেক্স’ শব্দটি। বিভিন্ন প্রেক্ষিতে শব্দটির অর্থ আলাদা। নয়া প্রজন্ম শব্দটিকে ব্যবহার করে প্রদর্শন অর্থে। কারও কোনও বিশেষ গুণ বা ক্ষমতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই শব্দটির ব্যবহার এখন প্রচলিত। অর্থাৎ, অল্পবয়সিরা যদি বলে ‘ফ্লেক্স করা’, তার মানে হল, নিজের একটি গুণকে বিশেষভাবে প্রদর্শন করছে কেউ। ‘Vibe Check’ কথাটিও বেশ শোনা যায়। অনলাইন-সংস্কৃতিতে বহুল ব্যবহৃত এই শব্দের মানে হল, কারও মুড, আবেগ ইত্যাদি পরখ করে দেখে নেওয়া। অর্থাৎ কে কেমন মানসিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বা কোনও জায়গার চরিত্র কেমন, তা বোঝাতেও ব্যবহার করা হয় শব্দটি। আবার Woke শব্দটি নয়া প্রজন্ম প্রয়োগ করে একেবারে অন্যরকম একটা অর্থে। শব্দটি কথার মধ্যে আসে সামাজিক বা রাজনৈতিক সচেতনতা বোঝাতে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিয়ে কে কতখানি সরব, সামাজিক ন্যায় নিয়ে কে কতখানি সচেতন, তা বোঝাতে এই শব্দের আমদানি। ঠিক যেভাবে, প্রান্তিক, অবদমিত বা দুঃস্থ মানুষে পাশে দাঁড়ানো বোঝাতে নয়া প্রজন্মের অভিধানে জায়গা করে নিয়েছে Allyship শব্দটি। Tea শব্দটিকে তারা আর শুধু চা হিসাবে ব্যবহার করছে না, বরং গল্পগুজব করা অর্থেই তা প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কথাবার্তায় বা লেখায় উঠে আসে Cancel Culture, যার অর্থও বেশ প্রসারিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়তো তাঁর মন্তব্য বা কাজের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। অর্থাৎ কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তির একটি বিশেষ কাজ খারিজ করছে নেটিজেনরা, তা বোঝাতেই ক্যানসেল কালচার-এর প্রয়োগ। আবার এই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেই, চলতি কোনও ট্রেন্ডে বা বিষয়ের নিরিখে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টাকে বলা হচ্ছে Clout chasing। কোনও একটা বিষয়ে ভীষণ অবাক হওয়া কিংবা একটু তির্যক ভাবে খোঁচা দিয়ে যদি বলতে হয় ‘ও মা, তাই নাকি!’, জেন জেড-এর ভাষায় তা হয়ে উঠছে, ‘I oop’।
আরও শুনুন: ঢালাও অফার দেখলেই অনলাইনে কেনার ধুম! অজান্তে মনের ক্ষতি করছেন না তো?
স্বভাবতই এই ধরনের শব্দপ্রয়োগের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত নন। নয়া প্রজন্ম কিন্তু এভাবেই তাদের মনের ভাব প্রকাশ করছে। এবং যোগাযোগের কাজটিও তাতে দিব্যি হয়ে যাচ্ছে। ফলত তাদের মনের কথা বুঝতে হলে, তাদের ভাষার ভাঁড়ারেও নজর রাখা জরুরি বইকি! নইলে নইয়া জেনারেশনের ‘ভাইব চেক’ করাই বা সম্ভব হবে কী করে!