ব্রিগেডে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ। সাক্ষী থাকল কলকাতা। তবে, গীতা কি যে কোনও জায়গাতেই পাঠ করা যায়? নাকি তার জন্য নির্দিষ্ট কোনও স্থান আছে? উত্তর রাখা আছে গীতাতেই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সাধারণত রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলের জন্যই পরিচিত ব্রিগেড। সেখানে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের আসর। রবিবার এমন আয়োজনেরই সাক্ষী থাকল কলকাতা। যদিও এই গীতাপাঠকে কেন্দ্র করে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে। গীতাকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেই উঠেছে দাবি। রাজনীতির জন্য পরিচিত ময়দানে গীতাপাঠ তাই অন্যরকম তাৎপর্যেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠেছে, গীতা কি যে কোনও জায়গাতেই পড়া যায়! নাকি তার জন্য নির্দিষ্ট কোনও স্থান আছে? সে উত্তর অবশ্য গীতাতেই রাখা ছিল।
আরও শুনুন: পুরুষোত্তম তত্ত্ব জানলেই বোঝা যায় ঈশ্বরের স্বরূপ, কী সেই জ্ঞান? উত্তর গীতায়
গীতার জন্ম যুদ্ধক্ষেত্রে। তার একেবারে গোড়ায় আছে প্রশ্ন। সে প্রশ্ন অর্জুনের। যার উত্তর দিতে গিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ধর্ম-উপদেশ দেন। তবে দেখা যায় যে, শুধু একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই সেই উপদেশের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। গীতাকে বলা হয় অপূর্ব সমন্বয় গ্রন্থ। গীতার যখন জন্ম, তখন বৈদিক ধর্মের প্রধান অঙ্গগুলির মত বেশ পাকাপাকি ভাবেই প্রতিষ্ঠিত। তবে নানা মতের মধ্যে যে বিরোধ ছিল, তা দূর করে গীতা একটি বিশিষ্ট মত প্রচার করে। এই কারণে গীতার ব্যাখ্যা যুগে যুগে প্রাসঙ্গিক হয়ে থেকেছে। সর্বধর্ম সমন্বয় গীতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল, আর তাই গীতার গন্তব্য পূর্ণতায়। এই পূর্ণাঙ্গ যোগধর্মকেই ভাগবত-ধর্ম বলা হয়েছে। সাধারণত, ভাগবত-ধর্ম বলতে বৈষ্ণবধর্মকেই বোঝায়। তবে শাস্ত্রকাররা এর অন্য ব্যাখ্যাও দেখা দিয়েছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন, সব ধর্মেরই মূলতত্ত্ব একই। গীতা সেই মূলেরই কথা বলে। অর্থাৎ গীতার মধ্যে যে সমন্বয় একটা বড় জায়গা নিয়েছে, তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। আবার গীতার যে ধর্ম-উপদেশ, তা যে কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই জন্ম নিয়েছিল, তাও নয়। এই জ্ঞান নিত্য, শাশ্বত। প্রতি কল্পে তা জন্ম নিয়েছে, আবার বিস্মৃতির আড়ালেও চলে গিয়েছে। সেই বিস্মৃতি যেন আবার পেয়ে না বসে তাই গীতাপাঠের পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গীতা কি সর্বত্রই পাঠ করা যায়? গীতা পাঠ করলে কী ফল মেলে তার বিস্তারিত বিবরণ আছে গীতা-মাহাত্ম্যে। যেখানে গীতাকে বলা হয়েছে উপনিষদগুলির সারাৎসার। অর্থাৎ সমগ্র উপনিষদরাশি যেন গাভীর মতো। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন দোহনকর্তা। তিনিই তুলে দিচ্ছে গীতার অমৃত, যা সুধীগণ পান করে থাকেন। অর্থাৎ সেই পান বা গীতাপাঠের মাধ্যমে সুধা আস্বাদনের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গার কথাও উল্লেখ করা আছে। গীতা-মাহাত্ম্য জানায়, শালগ্রাম শিলার সামনে, মন্দিরে, শিবের মন্দিরে, কোনও তীর্থস্থানে বা নদীর তীরে গীতা পাঠ করলে সৌভাগ্য লাভ হয়। এখানে সৌভাগ্য বলতে গীতার জ্ঞান অনুধাবনকেই বোঝানো হচ্ছে। কেননা, গীতা পাঠ করলে সব শাস্ত্রপাঠের ফল মেলে। এবং বেদপাঠ, দান, যজ্ঞে, তীর্থদর্শনে ভগবান যত না প্রসন্ন হন, তার থেকেও বেশি প্রসন্ন হন গীতাপাঠে। আরও কয়েকটি জায়গার উল্লেখ আছে, যেখানে গীতা পাঠ করা যায়। যেমন, যোগস্থানে, সিদ্ধপীঠে। বা শিলাময় কোনও দেবমূর্তির সামনে গীতাপাঠের নিয়ম। যজ্ঞে বা বিষ্ণুভক্তের সামনেও গীতাপাঠ করা যায়, আর করা যায় সাধুজনের সভাতে। গীতাপাঠ একান্ত কর্তব্য বলেই বর্ণনা করা হয়েছে গীতা-মাহাত্ম্যে। তবে, তা কোথায় কোথায় পাঠ করলে সৌভাগ্য এবং সিদ্ধি লাভ করা যায়, তাও নির্দিষ্ট করেই বলে দেওয়া হয়েছে গীতা-মাহাত্ম্যে।
ছবি: শুভজিৎ মুখোপাধ্যায়
==00==