চা ছাড়া আমাদের যেন দিন কাটে না। এই পানীয়টিকে ভারতে জনপ্রিয় করেছিল ব্রিটিশরা। এ গল্প তো আমাদের সবার জানা। তবে, এই দেশের মাটিকে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ ঐশ্বর্য হাতে ধরে চেনালেন যিনি, তাঁর কথা জানেন কি? তিনি মণিরাম দত্ত বড়ুয়া। ভারতের প্রথম চা বাগানের সূচনা হয়েছিল যাঁর হাত ধরে, ব্রিটিশদের চক্রান্তে প্রকাশ্যে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হয়েছিল তাঁকেই।
চা-নামক পানীয়কে ভারতবর্ষে জনপ্রিয় করে তুলেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তা খানিকটা নিজেদের স্বার্থেই। তবে এ দেশে চা-শিল্পের ঠিকঠাক শুরু কিন্তু হয়েছিল ভারতেরই একজন উদ্যোগপতির হাত ধরে। দেশের প্রথম চা-বাগানটি তৈরি হয়েছিল যাঁর সৌজন্যে, তিনি মণিরাম দেওয়ান।
আরও শুনুন: ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেল চলে বিশ্ব জুড়ে, কিন্তু আদতে এক কালো ইতিহাসকে মনে করায় এই দিন
পুরো নাম মণিরাম দত্ত বড়ুয়া। অসমের জোড়হাটে ১৮০৬ সালে জন্ম হয় তাঁর। দেশে চা-বাগানের সূচনায় মিশে আছে তাঁর অবদান। ব্রিটিশদের মধ্যে চা-প্রীতি এসেছিল মূলত চিন থেকেই। পনেরোশো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে চিনে বাণিজ্যিক ভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। তবে সে সময় বিনিময়মূল্য বলতে ছিল সোনা-রূপা। ফলে চা কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল ব্রিটিশ সওদাকারীরা। তাই অবাধে চিনে আফিম বিক্রি শুরু করলেন ইংরেজরা। এসবের চক্করে চিনের সঙ্গে দু-দফা যুদ্ধও লাগল ব্রিটিশদের।
মণিরামই প্রথম ব্রিটিশদের জানান অসম চা-এর কথা। সিংপো নামে এক সম্প্রদায় চা চাষ করছেন বলে জানান মণিরাম। তাঁর হাত ধরেই ভারতে গড়ে উঠল প্রথম চা বাগান। এই চা কিন্তু চিনের চা গাছের থেকে একেবারেই আলাদা বলে সিলমোহর দিয়েছে কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন।
আরও শুনুন: প্লেন নয়, জাহাজ নয়, বাসে করেই পাড়ি কলকাতা থেকে লন্ডনে… সত্যিই কি ঘটেছিল এমন ঘটনা?
এরপর চিন থেকে চায়ের আমদানি বন্ধ হল দেশ জুড়ে। তার বদলে ভারতেই শুরু হল চায়ের ব্যাপক উৎপাদন। ১৮৩৯ সালে নাজিরার ‘আসাম টি কোম্পানি’র দেওয়ান নিযুক্ত হলেন মণিরাম। সে সময় তাঁর বেতন ছিল মাসে ২০০ টাকা। তবে ইংরেজদের সঙ্গে মতের অমিল বাড়তে থাকায় এক বছরের মধ্যেই সে চাকরি ছেড়ে দিলেন মণিরাম। এরই মধ্যে সিনামারা ও সেঙ্গলুং এলাকায় চা বাগান তৈরি করে কাজ শুরু করেন তিনি। অসমের তো বটেই, বলতে গেলে বাণিজ্যিক ভাবে তিনিই ভারতের প্রথম চা-উৎপাদনকারী। ভারতবর্ষে মোট চা উৎপাদনের ৫০ শতাংশই আসে অসম থেকে, যার কৃতিত্ব কিন্তু মণিরামের। ১৯১১ সালে শিবসাগরের কাছে ‘তকলাই এক্সপেরিমেন্টাল স্টেশন’ নামে একটি চা গবেষণা কেন্দ্রও শুরু করেন তিনি।
শুনে নিন বাকি অংশ।