শরীরে জলের অভাব অনেকখানি পূরণ করে আমের শরবত। দোকান থেকে কেনা ‘সিন্থেটিক’ পানীয় পান করার পরেও যেমন বারবার শরীরে জলটান ধরে, বাড়িতে তৈরি ফলের শরবতে কিন্তু তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর তারই সঙ্গে সংরক্ষিত হয় প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, যা বর্তমান সময়ে অনেকখানি জৌলুস হারিয়েছে। এছাড়াও, কারখানায় ব্যাপক হারে উৎপাদিত সফ্ট ড্রিঙ্ক ছেড়ে, যদি বেশিরভাগ ক্রেতাই আমের শরবত বেছে নেন, তবে তা আম উৎপাদনকারী চাষিদের পক্ষেও লাভজনক হয়।
গরমকাল মানেই ঘামে জবজবে জামা, মুহুর্মুহু তীব্র জলটান। অসহনীয় দাবদাহের মধ্যে না চাইতেও তো বাড়ি থেকে বেরতেই হয় মানুষকে। আর তখনই হাতছানি দিয়ে ডাকে, দোকানে থরে থরে সাজানো মনকাড়া সব ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতল। অথচ ভুলে গেলে চলবে না যে, যেকোনও রকমের কোল্ড ড্রিঙ্ক কিন্তু শরীরের পক্ষে আদতে বিষই! বরং প্রাণ জুড়াতে বেছে নেওয়া যায় ঠাণ্ডা আমের শরবত (Mango Juice)। সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি নানান গুণ রয়েছে আমের শরবতে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে রীতিমত উপকারী।
গরমকাল বললেই বোধহয় আমের কথাই সবার প্রথমে মনে পড়ে বাঙালির। নুন-তেল দিয়ে কাঁচা আম মাখা হোক বা আম ডাল, পাকা আম দিয়ে মুড়ি মাখা হোক বা আম পান্না – আম যে কত রকমারি উপায়ে খাওয়া যেতে পারে, বাঙালিকে দেখে তা শিখতে হয় বৈকি! আর তাই শরবত তৈরির ক্ষেত্রেও অন্য কোনও ফলের চাইতে আমের প্রতি পক্ষপাতিত্ব খানিক বেশি থেকে যায়। মেশিনে প্রক্রিয়াকরণের বদলে বাড়িতে আমের শরবত তৈরি করলে, তাতে অনেক বেশি খাদ্যগুণ থাকে। পুষ্টিবিদরা বলেন, জুসারের বদলে ব্লেন্ডার ব্যবহার করা উচিৎ শরবত তৈরি জন্য। এতে ফলে থাকা ভিটামিন ও খনিজের বেশিরভাগটাই অক্ষত রয়ে যায়।
আমে যেমন ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে থাকে। এতে শরীরের অনাক্রম্যতা বাড়ে, চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। অল্প পরিমাণে হলেও, ভিটামিন ই, কে এবং বি-ও পাওয়া যায় আমে, যা সামগ্রিকভাবেই আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। হাড় মজবুত হয়, পেটের ভিতরের প্রদাহ অনেকাংশে কমে, সঙ্গে মস্তিস্কের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
গরমকালে নিয়মিত আমের শরবত (Mango Juice) খেলে নাকি চট করে ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার ভয় থাকে না, হাঁচি-কাশি কম থাকে। এমনকি হজমেও সুবিধে হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকার কারণে শরীরে জলের অভাবও অনেকখানি পূরণ করে আমের শরবত। অর্থাৎ, দোকান থেকে কেনা ‘সিন্থেটিক’ পানীয় পান করার পরেও যেমন বারবার শরীরে জলটান ধরে, বাড়িতে তৈরি ফলের শরবতে কিন্তু তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর তারই সঙ্গে সংরক্ষিত হয় প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, যা বর্তমান সময়ে অনেকখানি জৌলুস হারিয়েছে।
এছাড়াও, বাংলা তথা ভারতের কৃষিসভ্যতাকেও প্রভাবিত করে আমের শরবত (Mango Juice)! আজ্ঞে হ্যাঁ, কারখানায় ব্যাপক হারে উৎপাদিত সফ্ট ড্রিঙ্ক ছেড়ে, যদি বেশিরভাগ ক্রেতাই গরমকালে তৃষ্ণা মেটাতে আমের শরবত বেছে নেন, তবে তা আম উৎপাদনকারী চাষিদের পক্ষে লাভজনক হয়। এতে সুদূর ভবিষ্যতে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এমনকি সাধারণ কৃষিভিত্তিক সম্প্রদায়গুলির ক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছলতার পথও প্রশস্ত করে।
তবে সোডা মিশ্রিত সিন্থেটিক পানীয় হোক বা ফলের শরবত, যদি প্যাকেটজাত অবস্থায় দোকানে কিনতে পাওয়া যায়, তবে তাতে কখনওই বিশেষ উল্লেখযোগ্য খাদ্যগুণ কিছু থাকে না। তাই সত্যিই স্বাস্থ্যরক্ষা করতে চাইলে, বাড়িতে শরবত তৈরি করাই ভালো। যে পানীয়তে চুমুক দিলেই নিমেষে শরীর সতেজ হয়ে ওঠে, তা যদি একাধারে প্রাচীন সংস্কৃতির বাহক হয়, কৃষিসভ্যতাকেও ত্বরান্বিত করে, তবে আর মন্দ কি!