জন্ম থেকেই আক্রান্ত অটিজমে। ঠিক করে কথাও বলতে পারতেন না ১১ বছর বয়স পর্যন্ত। অক্ষর চিনতে শেখেন ১৮ বছর বয়সে। অথচ স্বপ্ন দেখতেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। অদম্য মনের জোরে সত্যিও করেছেন সেই স্বপ্ন। ১৮ বছর নিরক্ষর থাকা সেই ব্যক্তিই হয়েছেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। আসুন শুনে নিই, তাঁর গল্প।
কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। সেকথাই যেন মনে করিয়ে দিল এক ব্যক্তির জীবনের গল্প। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অক্ষরজ্ঞানই ছিল না তাঁর। তার উপর, অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার দরুন, চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, তাঁর পক্ষে নিজে নিজে কোনও কাজ করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু তাঁর মনের জোর ভুল প্রমাণ করেছে সবাইকে। নিজের চেষ্টায় তিনি হয়েছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনিষ্ঠতম অধ্যাপক।
আরও শুনুন: ভিক্ষা করে জমিয়েছিলেন ৫০ লক্ষ টাকা, ত্রাণ তহবিলে সর্বস্ব দান বৃদ্ধের
জাসোন আর্দে, বছর ৩৭-এর এই ব্যক্তির জীবনযুদ্ধ অন্য অনেকের থেকেই ছিল বেশ কঠিন। কারণ তাঁর ছোটবেলাটা মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। জন্মের সময় বোঝা না গেলেও, পরে বোঝা যায় তিনি অটিজমে আক্রান্ত। যার ফলে কথাই বলতে পারতেন না ১১ বছর বয়স পর্যন্ত। অক্ষর চিনতে শেখেন ১৮ বছর বয়সে। চিকিৎসকেরা বলেই দিয়েছিলেন, জাসোনের পক্ষে একা একা কিছু করা সম্ভব নয়। সারাজীবনের জন্য তাঁর একজন হেল্পার দরকার। যেমনটা এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে আর কী! জাসোনের বাড়ির লোকজনও এই অবস্থাকে দুর্ভাগ্য হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু একথা মানতে রাজি ছিলনে না খোদ জাসোন নিজেই। তাঁর সমবয়সিদের মতো স্কুলে যাওয়ার সুযোগ ছিল না তাঁর। বাড়িতে বসেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হওয়ার। সেই সব স্বপ্নের কথা লিখে রাখতেন ঘরের দেওয়ালে। ওইটুকু বয়সেই তিনি লিখে রেখেছিলেন, একদিন না একদিন বিশ্বের নামকরা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবেন।
আরও শুনুন: যিনি মা, তিনিই ঠাকুমা! দৃষ্টান্ত গড়ে বউমার সন্তান গর্ভে ধারণ শাশুড়ির
হয়েছেন-ও তাই। সম্প্রতি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, তিনিই নাকি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ অধ্যাপক। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ অধ্যাপকই শ্বেতাঙ্গ। সেখানে একজন কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে এমন কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি। যদিও তাঁর স্বপ্নপূরণের এই যাত্রপথ একেবারেই সহজ ছিল না। নিজের চেষ্টায় স্নাতকোত্তর, পিএইচডি-সহ একাধিক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন জাসোন। তবু কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিতে পারেননি তিনি। সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বহুবার। কিন্তু ওই যে, তাঁর অদম্য মনের জোর, সেই জেদের বশেই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অবশেষে স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এসেছে তাঁর হাতে। ভবিষ্যতে অনগ্রসর মানুষদের জন্য কাজ করতে চান জাসোন। একইসঙ্গে নিজেকে আরও উন্নত করে তোলাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।