কথায় বলে, ‘রাখে হরি মারে কে’। তবে শুধুমাত্র হরির ভরসায় থাকলেই হবে না। রাতের অন্ধকারে হাঙরঠাসা সমুদ্রে বাঁচতে চাই মনের জোরও। আর সেই মনের জোরে ভর করেই ১৭ কিলোমিটার পথ সমুদ্রে সাঁতার কাটলেন এক যুবক। কী ভাবে? আসুন, শুনে নিই তাঁর সেই দুঃসাহসিক লড়াইয়ের গল্প।
‘লাইফ অব পাই’ সিনেমাটির কথা ভোলেননি নিশ্চয়ই। যেখানে মাঝসমুদ্রে পাইয়ের নৌকাসঙ্গী হয়েছিল একটি বাঘ। ভাবছেন তো, এসব কেবল সিনেমাতেই ঘটে। উহু, মাঝেমধ্যে বাস্তবেও ঘটে যায় এমনই সব ঘটনা, যা হার মানাবে সিনেমার গল্পকেও। দূর থেকে সমুদ্রের ঢেউ গুণতে তো সকলেরই ভাল লাগে। কিন্তু হঠাৎ যদি গিয়ে পড়েন এক্কেবারে মাঝসমুদ্রে। আর সে সমুদ্র যদি হয় ভয়ঙ্কর হাঙরে ঠাসা, তাহলে? তখনও হাল ছাড়তে নেই। লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। আর সেই কথাই ফের মনে করিয়ে দিলেন এই যুবক। যেমনটা করে দেখিয়েছিল পাইও।
আরও শুনুন: মাত্র ১ পয়সার জন বেঁচে গেল ১০ হাজার টাকা, বানচাল ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ছক
মাছ ধরা বরাবরের নেশা এই যুবকের। সেই শখের টানেই মাঝেমধ্যেই পাড়ি জমান তিনি সমুদ্রে। তবে সেই নেশাই যে একদিন তাঁকে নিয়ে গিয়ে ফেলবে অকূল মাঝদরিয়ায়, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। নিজের ছোট্ট মাছ ধরার নৌকোটি নিয়ে সম্প্রতি পানামা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন জন ডিয়ার নামে অস্ট্রেলীয় এই যুবক। বেশ কিছুদিন সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে পৌঁছে গিয়েছিলেন একেবারে মাঝ সমুদ্রে। সার্ক পয়েন্ট বলে কুখ্যাতি রয়েছে সেই জায়গার। বুঝতেই পারছেন এমন নামকরণের কারণ। ঠিকই ধরেছেন, সমুদ্রের ঠিক এই জায়গাটাতেই সবচেয়ে বেশি হাঙরের বাস। আর সেখানে গিয়েই ডুবল জনের তরী। না, নৌকো না ডুবলেও, নৌকো থেকে হঠাৎই পড়ে গেলেন জন, একেবারে মাঝসমুদ্রে।
যেখানে হাঙরের ভয় সেখানেই রাত্রী হয়। জনের ক্ষেত্রে যেন ঘটল ঠিক তেমনটাই। অনেক চেষ্টা করেও আর নৌকাটিতে সওয়ার হতে পারলেন না তিনি। তখন মাঝরাত। প্রথমে মারাত্মক ভয় পেয়ে গেলেও মনের জোর হারালেন না তিনি। বরং চালিয়ে গেলেন যুদ্ধ। এখনও সে রাতের কথা মনে করলে শিউরে ওঠেন জন। না কাছে ছিল কোনও লাইফজ্যাকেট, না কোনও রকম সেফটি কিট। কোনওমতে সাঁতার কাটতে লাগলেন জন। ততক্ষণে তিনি বুঝে গিয়েছেন, আপাতত তাঁর পড়শি অসংখ্য হাঙর। আর যে কোনও মুহূর্তে তাঁদের খাদ্য হয়ে যেতে পারেন জন। তবু সাঁতার থামাননি। হঠাৎই পায়ের নিচে একটা কিছু অনুভব করেন তিনি। হাঙর নয় তো! মাথায় বিদ্যুতের মতো তরঙ্গ খেলে যায়। আতঙ্কে তখন পাগলের মতো হাত পা ছুঁড়ছেন জন। কিন্তু শেষপর্যন্ত কপালজোরে বেঁচে গেলেন জন। না, হাঙর নয়, তবে ততক্ষণে তাঁর শরীর ঠোকরাচ্ছে অসংখ্য ছোটবড় মাছ। দিব্যি যন্ত্রণা টের পাচ্ছেন জন। তবু পাগলের মতো সাঁতার চালিয়ে যান তিনি। ওই ভাবেই পেরোন ৯ নটিক্যাল মাইল। দেখতে গেলে সেদিন প্রায় ১৭ কিলোমিটার পথ সাঁতার কেটেছিলেন জন। রাতের অন্ধকারে, তা-ও আবার হাঙরে ঠাসা ভয়াবহ সমুদ্রে।
আরও শুনুন: অন্তর্বাসের নেই লিঙ্গভেদ! প্যান্টি পরে এবার প্রথা ভাঙলেন পুরুষ মডেল
তবে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন জন। কোনও মতে একটা পাথরের কাছে পৌঁছতে পেরেছিলেন সেদিন। কয়েক ঘণ্টার মাথায় তাঁর কাছে পৌঁছয় উদ্ধারকারী দল। পানামার বুক থেকে তাঁক ভাঙাচোরা নৌকাটাও উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এত কিছুর পরেও মাছ ধরার শখে এতটুকু টান পড়েনি তাঁর। ফের সুযোগ পেলেই নৌকো নিয়ে বেরিয়ে পড়তে চান জন। তবে যে যাই বলুক, সেদিন মনের জোরই শেষপর্যন্ত বাঁচিয়ে দিয়েছিল তাঁকে। আর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সেই দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চারের কথা মনে রাখবেন জন।