চারিদিকে অকূল পাথার। পথ হারিয়ে ভেসে চলেছেন অজানা দিকে। সঙ্গী কেবল দুটি মৃতদেহ। এই অবস্থাতেই একটি ছোট্ট নৌকায় ৬৭ দিন কেটে যায় ব্যক্তির। কী হল তারপর?
জল শুধু জল, দেখে দেখে চিত্ত মোর হয়েছে বিকল। এই ব্যক্তি এ কথা বলতেই পারতেন। কেবল কথার কথা নয়, সত্যি সত্যিই মানসিক পরিস্থিতি বিকল হয়ে যাওয়ার মতোই দশায় পড়েছিলেন তিনি। একটি ছোট্ট নৌকা নিয়ে সাগরে বেরিয়েছিলেন যখন, তখন স্বপ্নেও ভাবেননি যে হারিয়ে যাবেন সমুদ্রের মধ্যে। এমনকি সেই যাত্রায় হারাতে হবে দুই সঙ্গীকেও। যারা সম্পর্কে তাঁরই ভাই এবং ভাইয়ের ছেলে। প্রিয়জনদের মৃতদেহের সঙ্গেই ৬৭ দিন জলে ভেসে চলেছিলেন এই ব্যক্তি। সঙ্গে না ছিল খাবার, না পানীয় জল। বাকিদের মতো একই নিয়তি হতে চলেছে তাঁরও, ধরে নিয়েছিলেন এমনটাই।
তবে, রাখে হরি মারে কে! ৬৭ দিন সাগরের বরফশীতল জলে ভেসে থাকার পর উদ্ধার পেলেন যে ব্যক্তি, তিনি এ কথা বলতেই পারেন। হ্যাঁ, ভাগ্যের জোরেই হয়তো, দু’মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে অবশেষে তিনি উদ্ধার পেয়েছেন। রাশিয়ার ওখটস্ক সাগরে নিখোঁজ হওয়া ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন মৎস্যজীবীরা।
জানা গিয়েছে, বছর ৪৬ বয়সের ওই ব্যক্তির নাম মিখাইল পিচুগিন। মিখাইলের স্ত্রী জানিয়েছেন, আগস্ট মাসের শুরুতে একটি ছোট নৌকায় সাগরে পাড়ি দিয়েছিলেন মিখাইল, তাঁর ৪৯ বছর বয়সি দাদা সার্গেই এবং দাদার ছেলে ইলায়া, যার বয়স ১৫। তিমি দেখবেন বলে সাগর সফরে বেরোন তিনজনে। সঙ্গে ছিল দু’সপ্তাহের খাবার। বলার অপেক্ষা রাখে না, সে খাবার ফুরিয়েছে বহুদিনই। তবে মনে করা হচ্ছে, শারীরিক ওজন বেশি হওয়ায় অনেক দিন যথেষ্ট না খেয়েও বেঁচে গিয়েছেন মিখাইল। সাগরে ভ্রমণের জন্য যখন বেরিয়েছিলেন, তখন তাঁর ওজন ছিল ১০০ কেজি। ৬৭ দিন পর যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়, তখন ওজন অর্ধেকে নেমে গিয়েছে তাঁর।
তাঁরা যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেখান থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে নৌকাটি উদ্ধার করা গিয়েছে। ওখটস্ক পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে শীতল সাগরগুলোর একটি। সেখানে মিখাইল এতদিন কীভাবে বেঁচে ছিলেন, তা-ই সকলের কাছে বিস্ময়। তাঁকে ফিরে পাওয়ার ঘটনাকে অলৌকিক বলেই আপাতত ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে মিখাইলের পরিবার।