যুবতীর আয়ু আর মাত্র কয়েকটা দিন। মারণরোগ থাবা বসিয়েছে শরীরে। ইচ্ছে ছিল, আভিজাত্যে মোড়া রাজকীয় আসরে বিয়ে করবেন। সে ইচ্ছে বুঝি অধরাই থেকে গেল! কিন্তু তাই বা হয় কী করে! স্বপ্ন সত্যি করতে এগিয়ে এলেন তাঁর ছোট্টবেলার বন্ধু তথা প্রেমিক। গোটা হাসপাতালটাই রাজকীয় বিবাহ-বাসরের আদলে সাজিয়ে দিলেন তিনি। তারপর? আসুন শুনে নিই।
হাসপাতাল নাকি বিয়ের মঞ্চ! দেখে যেন ধাঁধা লাগে। গোটা হাসপাতাল বদলে গিয়েছে বিখ্যাত ডিজনিল্যান্ড পার্কে। আসলে সেভাবেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে। চারিদিকে নতুন পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অতিথিরা। আর মধ্যমণি হয়ে হুইলচেয়ারে বসে আছেন পাত্রী। এমনটা শুনে সিনেমার সেট মনে হলেও বাস্তবেই দেখা মিলেছে এমন দৃশ্যের। নিজের প্রিয়তমার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে এমনটাই আয়োজন এক যুবকের।
আরও শুনুন: সুন্দরী হয়েই যত বিপদ! নেটদুনিয়ায় শিকার বয়কটেরও, অভিযোগ রূপসি মডেলের
দক্ষিণ লন্ডনের ক্রিস্টি এবং অ্যালেক্স একে অপরের বন্ধু। সেই ছোট্টবেলা থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়িয়েছে প্রণয়ে। তারপর দীর্ঘ দশ বছর একসঙ্গে কাটিয়েছেন তাঁরা। কোল আলো করে জন্ম নিয়েছে ফুটফুটে সন্তান। তবে সেই সুখের সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কয়েক বছর আগে ক্রিস্টি দেখেন, তাঁর হাতের নীচে ছোট্ট একটা ফোলা অংশ। প্রাথমিক ভাবে অবহেলা করলেও, কিছুদিনের মধ্যেই জানা যায় সেটি টিউমার। সার্জারির মাধ্যমে তা বাদ দেওয়া হলেও ততদিনে শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণরোগ ক্যানসার। তাও চিকিৎসকেরা আশ্বস্ত করেন। জানান, সময় লাগলেও সুস্থ হয়ে উঠবেন ক্রিস্টি। কিন্তু অদৃষ্টের লিখন খণ্ডাবে কে! ধীরে ধীরে অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে তাঁর।
প্রেমিকার এমন অবস্থা দেখেই তড়িঘড়ি এনগেইজমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন অ্যালেক্স। অসুস্থ বান্ধবীকে নিয়েই হাজির হন ডিজনিল্যান্ডে। পৃথিবী বিখ্যাত এই পার্কে যাওয়া, অন্য অনেকের মতোই স্বপ্ন ছিল ক্রিস্টির। সেকথা জানতেম অ্যালেক্স। তাই দুজনে মিলে সেখানেই বাগদান সেরে ফেলেন। সেইসব মুহূর্তের আবেগঘন ছবি নেটদুনিয়ায় প্রকাশও করেন তাঁরা। কিন্তু ফেরার পথেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্রিস্টি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, হাতে আর বেশিদিন সময় নেই। নিজের এমন অবস্থার কথা জানতেন ক্রিস্টিও। তাই শেষ ইচ্ছা হিসেবে তিনি বলেন বিয়েটা সেরে ফেলতে চান তিনি। এই অবস্থায় অসুস্থ ক্রিস্টিকে কোথাও নিয়ে যাওয়াও সম্ভব ছিল না। তাই অ্যালেক্স সিদ্ধান্ত নেন, হাসপাতালেই সারবেন বিয়ের অনুষ্ঠান। আর তাঁর প্রেমিকার ইচ্ছা মতো গোটা হাসপাতালটাকেই সাজিয়ে ফেলবেন রাজকীয় আভিজাত্যে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। মাত্র দশ দিনের মধ্যে সব কিছুর আয়োজন করে ফেলেন অ্যালেক্স। নিজের একরত্তি ছেলেকে নিয়েই বিয়ের মঞ্চে পা রাখেন তিনি। চারিদিক তখন ফুলের চাদরে মোড়া। সাজানোর বহরে হাসপাতাল পরিণত হয়েছে ডিজনিল্যান্ডে। অতিথিরাও আনন্দের সঙ্গে যোগ দেন সেই আসরে। সময়মতো ভালোয় ভালোয় মিটে যায় বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু তারপরই নেমে আসে দুর্যোগের কালো মেঘ। ক্রিস্টির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। সকলকে কাঁদিয়ে বিয়ের পরদিনই ইহলোক ত্যাগ করেন ক্রিস্টি।
আরও শুনুন: বিপাকে পর্ন তারকা! ‘নকল’ বন্দুক দেখে শুটিংয়ে হানা ‘আসল’ পুলিশের
তারপর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা মাস। তবু ক্রিস্টির অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি অ্যালেক্স। শুধুমাত্র সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত রাখেন বলেই জানিয়েছেন তিনি। তবে প্রেমিকার শেষ ইচ্ছা তিনি পূরণ করতে পেরেছেন। এতটুকু স্বস্তি নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছেন অ্যালেক্স।