যা কিছু তথাকথিত মেয়েলি ব্যাপার, তার প্রতি একরকম নাকউঁচু দূরত্ব রাখার অভ্যাস অনেক পুরুষেরই। ঋতু তেমনই একটি ব্যাপার। নিতান্তই প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হলেও, তা নিয়ে অধিকাংশ পুরুষের মনেই অবজ্ঞা কিংবা অবহেলা রয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই উদাসীনতার উলটো পথে হেঁটেছেন তিনি ও তাঁর পরিবার, সম্প্রতি এ কথাই জানালেন এক ব্যক্তি। কী করেছেন তাঁরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ঋতু একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঋতু নিয়ে সমাজে এখনও অনেকরকম ট্যাবু রয়েই গিয়েছে। বিশেষ করে কোনও পুরুষের সামনে তথাকথিত ‘মেয়েলি’ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তিতে পড়েন অনেক মহিলাই। উলটো দিকে অনেক পুরুষেরও কাছেও ঋতু সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। বরং একে মেয়েদের ব্যাপার মনে করেই একরকম সচেতন দূরত্ব বজায় রেখে চলেন তাঁরা। কিন্তু এই পরিবারটিকে সেই ধারায় উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বলা যায় অনায়াসেই। মায়ের ঋতুকালে কীভাবে তাঁর পাশে থাকে গোটা পরিবার, সে কথাই ভাগ করে নিয়েছেন ছেলে। মাকে এই সময় কার্যত রানির মতোই আরামে রাখার চেষ্টা করেন তাঁরা। তবে শুধু ঋতুর সময়েই নয়, মায়ের যে কোনও অসুস্থতার সময়েও তাঁর সব খেয়াল রাখেন তাঁরাই।
আরও শুনুন: খুদের খেয়াল! অনলাইনে ‘ভুল’ করে অর্ডার ৩ লক্ষ টাকার জিনিস, কী হল তারপর?
হ্যাঁ, ভগত পরিবারের পুরুষদের কাছে এমনটা করা কোনও বড় বিষয় নয়। ঋতুর সময় মাকে সাধ্যমত স্বস্তি দেওয়ারই চেষ্টা করেন তাঁরা, মায়ের সুখ সুবিধার বিষয়ে তৎপর থাকেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনটাই জানিয়েছেন অনীশ ভগত। তিনি আরও জানিয়েছেন, কেবল তিনি একাই নন, তাঁর ভাই এবং বাবাও একইভাবে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন। এমনকি ঋতু কী, তার জন্য নারীর শরীরে কী কী বদল চলতে থাকে এবং সেই কারণে তার শরীর মনে কী সমস্যা হতে পারে, এই যাবতীয় বিষয় তিনি প্রথম জেনেছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকেই, এমনটাই জানিয়েছেন অনীশ। ঋতু প্রসঙ্গে ছেলেদের প্রথম সচেতন করেছিলেন তাঁদের বাবাই। সাধারণত বয়ঃসন্ধিতেই নারীশরীরে এই হরমোনঘটিত বদলের সূচনা হয়। তাই সেই সময়ে মায়েরা মেয়েদের এই প্রসঙ্গে প্রাথমিক পাঠ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই পরিবারে যে সবটাই উলটপুরাণ। তাই ১৩ বছর হতে না হতেই দুই ছেলেকে ঋতু নিয়ে সচেতনতার পাঠ দিয়েছেন তাদের বাবা। আর বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেবল মেয়েরাই নয়, এ কথা ছেলেদেরও জানা প্রয়োজন সমানভাবেই। কারণ মা কিংবা অন্য কোনও আত্মীয়া, বা বান্ধবীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাও সমান জরুরি।
আরও শুনুন: ধ্বংসস্তূপে আটকে ছিল ১২৮ ঘণ্টা, ৫৪ দিন পর মাকে খুঁজে পেল তুরস্কের সেই শিশু
সমাজতাত্ত্বিকেরা বারবারই বলেন, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই সংবেদনের পাঠ শেখা জরুরি। তবেই লিঙ্গবৈষম্য ঘুচে গিয়ে সমাজ আরও অনেক বেশি মানবিক হয়ে উঠতে পারবে। সেই মানবিকতার দিকে পৌঁছতে চেয়েই নিজেদের এমন করে গড়ে নিয়েছেন ভগত পরিবারের এই পুরুষেরা।