চুরি করেছিলেন টাকা। তাও আবার মন্দিরের দানবাক্স থেকে। তাতে বেজায় আত্মগ্লানিতে ভুগছিলেন যুবক। ২৭ বছর সেই যন্ত্রণা তাড়া করেছে। তাই টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার জন্য লিখেছেন চিঠিও। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড় ধরা! চলতি প্রবাদ, জনপ্রিয়ও বটে। যার মানেটা খানিকটা এরকম- চুরি করলে কর, কিন্তু ধরা পড় না। এই যুবকও তেমনটাই করেছিলেন। সবার নজর এড়িয়ে টাকা চুরি করেছিলেন। কিন্তু সে টাকা তার সহ্য হয়নি। ২৭ বছর পর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, টাকা ফেরত দেবেন।
চুরির ঘটনা নতুন কিছু নয়। এ দুনিয়ায় আখচার কিছু না কিছু চুরি হচ্ছে। কারও ফোন, কারও মানিব্যাগ, কারও আবার অন্য কিছু। মনচুরির সঙ্গে এসবের তুলনা চলে না। কারণ যার যায় সেই বোঝে হারানোর যন্ত্রণা। তাতে ভালোবাসা বা সহানুভুতির বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। চুরির রকমফেরও রয়েছে। এক না জানিয়ে চুপি চুপি চুরি করা। কেউ কিছু টের পাওয়ার আগে মূল্যবান সামগ্রী হাপিস। আবার বলে কয়ে চুরির স্বভাবও থাকে অনেকের। তার পোশাকি নাম ছিনতাই। রাস্তাঘাটে আখচার এমন ঘটনা হয়ে থাকে। এতে প্রাণহানির ঝুঁকিও থাকে বইকি। আর হয় পকেটমারি। নিঃশব্দে পকেট থেকে মানিব্যাগ উধাও করে দেবে চোর। মালিক টেরটিও পাবেন না। এই চোর অবশ্য প্রথম পথেই হেঁটেছেন। অর্থাৎ সবার নজর এড়িয়ে চুরি করেছেন টাকা। তাও আবার যে সে জায়গা নয়, একেবারে মন্দিরের দানবাক্স থেকে। ভগবানের উদ্দেশে দান করা টাকা সাধারণত মন্দির কর্তৃপক্ষের জিম্মায় থাকে। তা জমা হয় নির্দিষ্ট একটা বাক্সে। স্রেফ নগদ টাকা নয়, দানবাক্সে গয়নাগাটিও দিয়ে যেন অনেকে। এই চোর সেরকমই এক দানবাক্স থেকে হাপিস করেছিলেন ১৮০০ টাকা। এরপর কেটে গিয়েছে ২৭ বছর। কিন্তু টাকা হজম করতে পারেননি চোর। দিনরাত ভুগেছেন আত্মগ্লানিতে। তাই ঠিক করেছেন মন্দিরে টাকা ফেরত দেবেন। বাস্তবে করেওছেন তাই।
ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার। সেখানকার গিয়েনসাং প্রদেশের এক মন্দিরে এমন কাণ্ড ঘটেছিল। তবে ১৯৯৭ সালে। সে দেশের অবস্থা তখন খুব একটা ভালো নয়। অন্তত অর্থনৈতিক দিক দিয়ে। এমন এক পরিস্থিতিতে ওই মন্দিরের দানবাক্স থেকে ১৮০০ টাকা চুরি করেন এক চোর। এতদিন পর আত্মগ্লানিতে ভুগে মন্দিরে একটা চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। তাতে লিখেছেন নিজের ভুলের কথা। সেইসঙ্গে পাঠিয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। তাঁর দাবি, টাকা চুরির সময় তাঁর বয়স খুব একটা বেশি ছিল না। তাই ঝোঁকের বশে করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এক সন্ন্যাসী তাঁর ভুল ধরান। কোনও শাস্তি না দিলেও সেই সন্ন্যাসীই তাঁকে বুঝিয়েছিলেন এই কাজ ভুল। এরপর থেকে আর চুরি করেননি ওই ব্যক্তি। বরং সুখে শান্তিতে সংসার গড়েছেন। তবে ওই টাকা চুরির আত্মগ্লানি তাঁকে তাড়া করে বেরিয়েছে এতদিন। তাই ফেরত দিয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছেন।