পড়ুয়া নয়। স্কুলের দেওয়া বাড়ির কাজ করছেন গৃহশিক্ষক। তার জন্য মোটা টাকা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। একেবারে আড়াই লক্ষ টাকা। যদিও এতে তেমন অবাক হননি ওই শিক্ষক। কেন জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
স্কুলে গেলেই মিলবে হোমটাস্ক। না করলে শাস্তি। সেই ভয়ে অনেক খুদেই স্কুলে যেতে চায় না। তবে হোমটাস্ক যদি অন্য কেউ করে দেয়, তাহলে আর ভয়ের বালাই নেই। বাড়ির বড়রা কিংবা খানিক সাহায্য অবশ্যই করেন। তবে পুরোপুরি হোমটাস্ক করে দেওয়ার ভার কেউই নেন না। আসলে, বাড়ির কাজ করে দিলি খুদে শিখবে কী? এমনটা বলে থাকেন সকলে।
আরও শুনুন: প্রসবযন্ত্রণায় কাতর মহিলা, শুনেই প্রচার ফেলে হাসপাতালে ছুটলেন চিকিৎসক প্রার্থী
তবে ছবিটা সর্বত্র এক নয়। বিশেষ করে দুবাই-এর মতো দেশে। এমনিতে সে দেশে ধনকুবেরের ছড়াছড়ি। সন্তানের এতটুকু কষ্ট হোক তাঁরা চান না। তাই না চাইতেই হাতে চাঁদ পায় খুদের দল। হোমটাস্ক সেখানে তুচ্ছ ব্যাপারই বটে। সম্প্রতি দুবাইয়ের অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে এমনই এক ঘটনার কথা উল্লেখ করেন এক গৃহশিক্ষক। আমাদের দেশে শিক্ষকদের অবস্থা যেমনই হোক, দুবাইয়ে গৃহশিক্ষকরাও মোটা টাকা রোজগার করতে পারেন। শুধু তাই নয়, ছাত্রের সামান্য আবদার মেটালেই মিলতে পারে মোটা টাকার ইনাম।
বয়স ২৫। এইসময় অনেকেই টিউশন পড়িয়ে হাতখরচ জোগান। এই যুবকও ঠিক করেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশন পড়াবেন। তবে দুবাইয়ে সবকিছুই খানিক আলাদা। তাই আলাদা ভাবে অনেকগুলো বাড়িতে পড়ানোর সুযোগ থাকত না। দরকারও পড়ত না বোধহয়। একজনকে পড়িয়েই যা আয় হত, তা হাত খরচের কয়েক গুণ। তা এমন এক বাড়ির খুদেকে পড়াতে গিয়ে ওই যুবক আবিস্কার করেন, যাবতীয় বিলাসিতার সব ব্যবস্থাই সেখানে রয়েছে। পাঁচ তলা বড়িতে, জিম, সুইমিং পুল, সিনেমা হল …কী নেই! এখানেই শেষ নয়। বাড়িতে কাজের লোকও রয়েছেন অন্তত ডজন খানেক। তার মধ্যে কারও দায়িত্ব রান্না করা, কেউ বা স্রেফ খাবার পরিবেশন করেন। এই ধরনের বাড়িতে গৃহ শিক্ষকও এক প্রকার কর্মীই বলা চলে। স্রেফ তিনি শিক্ষকতা করেন বলে আলাদা সম্মান পাবেন, এমনটা মোটেও নয়। সকলেই সম্মানের সঙ্গে কাজ করেন। কিন্তু এ দেশের মতো, সন্তান পড়ছে কি না, সেই খোঁজ নেওয়ার ফুরসত নেই বাবা-মায়ের। সেই কাজ করে ন্যানি, অর্থাৎ যার কাঁধে খুদেকে মানুষ করার দায়িত্ব। যুবকের কথায়, কালেভদ্রে ছাত্রের বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। যাবতীয় অভিযোগ পরামর্শ ন্যানির কাছেই। একদিন পড়াতে গিয়ে অদ্ভুত এক বিষয় আবিষ্কার করে ওই যুবক। স্কুলের হোমটাস্ক ছুঁয়েই দেখেনি খুদে। অথচ নিশ্চিন্ত বদনে বসে রয়েছে। জিজ্ঞাসা করায় উত্তর এল, সবটা বাবা সামলে নেবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাবা এসে মোটেই ওই হোমটাস্ক করে দেবেন না। তাহলে?
আরও শুনুন: দলিতরা কেন জল পেয়েছে? প্রতিবাদে ভোট দিলেন না ৯০০ হিন্দু গ্রামবাসী
দায়িত্ব এসে পড়ল যুবক গৃহশিক্ষকের কাঁধেই। তিনিও কিছু না ভেবে সেই কাজ করে দিলেন। আর এই কাজে খুশি হয়েই স্যারকে উপহার দিল ওই খুদে। মোটেও শিশুসুলভ উপহার নয়। একেবারে নগদ পুরস্কার। যার ভারতীয় টাকায় মূল্য আড়াই লক্ষ টাকা। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। নিজের এই অভিজ্ঞতার কথা বলে এমনটাই বলেছেন ওই গৃহশিক্ষক। তার সঙ্গে এও বলেন, এ দেশে এই ধরনের কাণ্ড একেবারেই স্বাভাবিক। সন্তানের কষ্ট কমাতে জলের মতো টাকা খরচ করার আগে দুবার ভাবেন না সেখানকার মানুষজন।তাই এই ঘটনাকেও স্বাভাবিক বলেই মেনে নিয়েছেন ওই যুবক।