সামান্য ঘটনা অসামান্য আলোড়ন তুলেছে নেটদুনিয়ায়। প্রতিদিন আমরা কতকিছু অবজ্ঞা করি। মানুষকে খুশি করতে কী প্রাণপণ চেষ্টাই না করে যাই! অথচ কত অল্প আয়োজনেই না পাশের মানুষটি খুশি হয়ে উঠতে পারে। এক যাত্রী আর বাস কন্ডাক্টরের বন্ধুত্বের ঘটনা যেন সে কথাই বলছে।
তাঁরা আমাদের চেনেন। বাড়ির বাসস্টপ, এমনকী গন্তব্য পর্যন্ত জানেন। কিন্তু তাঁদের নাম-ধাম ঠিকানা কিছুই আমরা জানি না। জানতে চাইও না। এমনকী তাঁরা হাতে যে টিকিটটি ধরিয়ে দেন, তা অনেক সময় যত্ন করে রাখার সৌজন্যও দেখানো হয় না। হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ধুলোয় মিশে যায় টিকিট। সম্পর্কটা যেন নেহাত সাময়িক লেনদেনের। সত্যিই কি তাই? একদিন যাত্রাপথে চেনা মুখ না দেখলে কিন্তু অস্বস্তিই হয়। হ্যাঁ, তাঁরা বাসের কন্ডাক্টর। দিনে মাত্র খানিকটা সময় তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়। তবে সেই পথের সাথি আমাদের খেয়াল রাখেন। নিত্যযাত্রীদের সুযোগ সুবিধার কথা সব সময় মাথায় রাখেন।
এর উলটোটা অবশ্য হয় না। অনেক সময়ই সামান্য ব্যাপার নিয়ে তাঁদের সঙ্গে খিটমিট বেধে যায়। হয়তো ভাড়ার হিসাবে কিছু গরমিল হয়েছে। বা খুচরো নেই বলে তাঁরা ব্যাজার। কিংবা যেখানে থামানোর কথা তার থেকে একটু এগিয়েই গিয়েছে বাস। এই নিয়েই সমস্যা। কী আর করা যাবে! এই সব খুচরো ঝামেলা সত্ত্বেও কন্ডাক্টদের সঙ্গে দৈনন্দিনের এক রকম সখ্য গড়ে ওঠে। তার বেশি কিছু এগোয় না। তবে কেউ কেউ থাকেন এই সম্পর্ককে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে যান। ঠিক সেরকমই এক ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি, যেটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। এক বাস কন্ডাক্টরের হাতে তাঁরই ছবি তুলে দিয়েছেন এক যাত্রী। তবে সেটা খুব যে পরিকল্পনা করে তিনি করেছেন, এমনটা নয়।
আরও শুনুন: অন্য এক ‘কাবুলিওয়ালা’র গল্প! ১১ বছর পর কলেজের রক্ষীকে বাড়ি ফেরালেন পড়ুয়ারা
প্রতিদিনের মতোই জনৈক যাত্রীকে টিকিট দিয়েছিলেন ওই কন্ডাক্টর। যথারীতি তিনি তা ছুড়ে ফেলে দেন মাটিতে। যুবকটি সেই টিকিট কুড়িয়ে নেন। তিনি শিল্পী। আর তাই ঠিক করেন, ওই একটুকরো কাগজেই এঁকে ফেলবেন কন্ডাক্টরের ছবি। টিকিটের পিছনের অংশটি সাদা-ই ছিল। অতএব পেনসিল বের করে তিনি স্কেচ করতে শুরু করেন। দেখতে দেখতে বাস পৌঁছে যায় ডিপোয়। সকলে নেমে গেলে টিকিটটি তিনি ওই কন্ডাক্টরের হাতে তুলে দেন। প্রথমে তো তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। এরপর যখন টিকিটটি তাঁকে উলটে দেখতে বলা হয়, তখন রীতিমতো অবাক হয়ে যান তিনি। এ তো তাঁরই ছবি! আর সে ছবি এঁকেছেন তাঁরই সামনে দাঁড়ানো এই যুবক শিল্পী! বিস্ময়ে আনন্দে তখন তাঁর মুখে ফুটে ওঠে অপূর্ব হাসি। তাঁর মতো ছাপোষা মানুষের ছবিও যে কেউ আঁকবেন, এমনটা বোধহয় আগে ভাবেননি তিনি।
ঘটনা মাত্র এটুকুই। তবে এই সামান্য ঘটনা অসামান্য আলোড়ন তুলেছে নেটদুনিয়ায়। প্রতিদিন আমরা কতকিছু অবজ্ঞা করি। মানুষকে খুশি করতে কী প্রাণপণ চেষ্টাই না করে যাই! অথচ কত অল্প আয়োজনেই না পাশের মানুষটি খুশি হয়ে উঠতে পারে। এ ঘটনা সেই কথাই জানান দিচ্ছে। আর বলে দিচ্ছে, মানুষ অন্য কিছু নয়, চায় ভালোবাসা আর সম্মান। প্রতিদিনের জীবনে যদি সকলকে সেটুকু দেওয়া যায়, তাহলেই পৃথিবীটা ওই হাসির মতোই সুন্দর হয়ে ওঠে।