মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের মেয়েকে গৃহবন্দি করেছিলেন তার বাবা। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৩৬ বছর। এতদিন ধরে ওই বদ্ধ ঘরেই আটকে ছিল মেয়েটির পৃথিবী। শুধুমাত্র তাই নয়, এতগুলো দিন নিজের মেয়েকে রীতিমতো শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন ওই ব্যক্তি। এই অমানবিক অত্যাচারের কথা শুনে শিউরে উঠেছেন সকলেই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মেয়ে নাকি মানসিক ভাবে সুস্থ নয়। তাই দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল একটি বদ্ধ ঘরে। আর এমন অমানবিক কাজের নেপথ্যে ছিল তার নিজেরই বাবা। এত বছর পর এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে মুক্তির স্বাদ পেলেন সেই অসহায় মহিলা।
আরও শুনুন: গরুকে ‘জাতীয় পশু’ ঘোষণার আরজি, ভর্ৎসনা করে মামলা নাকচ সুপ্রিম কোর্টের
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই শিকল পরিয়ে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এক বদ্ধ ঘরে। সেই অন্ধকার বদ্ধ ঘরেই জীবনের ৩৬ বছর কাটিয়েছেন স্বপ্না জৈন নামের এই মহিলা। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৩। কিন্তু এতগুলো বছর বাইরের জগতের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই ছিল না তাঁর। আর তাঁকে এমনভাবে ঘরে আটকে রেখেছিলেন তাঁরই বাবা গিরিশ চন্দ। তিনি মনে করতেন তাঁর মেয়ে মানসিক ভাবে অসুস্থ। তাই বাইরের কারও সঙ্গে তাঁকে মেলামেশা করতে দিতেন না। তারপর নিজেই ঠিক করেন মেয়েকে ঘরের মধ্যেই আটকে রাখবেন। তখন স্বপ্নার বয়স মাত্র ১৭। ওই বয়সেই মেয়েকে একটি ঘরে কার্যত বন্দি করে ফেলেন গিরীশ। জানা যায়, নিজেরই বাড়িতে প্রায় কয়েদির মতো আচরণ করা হত স্বপ্নার সঙ্গে। তাঁকে ভালভাবে স্নান করতে দেওয়া হত না। এমনকি বন্ধ দরজার নিচ দিয়েই খাবারের থালাটুকু বাড়িয়ে দেওয়া হত তাঁর দিকে।
আরও শুনুন: চুম্বনে অ্যালার্জি! ডেটে গিয়ে প্রেমিকের আদরের জেরে প্রাণ নিয়েই টানাটানি যুবতীর
প্রথমে বাইরের কেউ বুঝতে না পারলেও, ধীরে ধীরে প্রতিবেশীরা স্বপ্নার এমন অবস্থার কথা জানতে পারেন। তাঁরাই এরপর স্বপ্নার পরিবারকে পরামর্শ দেন, ঘরে আটকে না রেখে তাঁরা যেন নিজেদের মেয়ের ভালোভাবে চিকিৎসা করান। কিন্তু তাঁদের পরামর্শে কর্ণপাতই করেনি ওই পরিবার। ফলে এতদিন ধরে কোনওভাবেই স্বপ্নাকে মুক্ত করতে পারেনি বাইরের কেউ। কিন্তু সম্প্রতি স্বপ্নার বাবার মৃত্যুর পর অবস্থা পালটায়। সেই প্রতিবেশীরাই ঘটনার কথা স্থানীয় বিধায়ককে জানান। বিধায়কের উদ্যোগেই স্বপ্নার বাড়িতে পুলিশ সহ হানা দেয় সেবা ভারতী নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে উদ্ধার করে স্বপ্নাকে নিয়ে যাওয়া হয় এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দীর্ঘদিনের এই ট্রমা থেকে বেরোতে তাঁর সময় লাগবে বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে এতদিন পর ওই মহিলা যে আপাতত মুক্তি পেয়েছেন, এটাই স্বস্তির কথা।