সাধ করে কেনা জিনিস খোয়া গেলে কারই বা ভাল লাগে বলুন। আর তা যদি হয় কোন প্রিয় ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট, তবে তো আর কথাই নেই। তবে খোয়া যাওয়া জিনিসের পিছনে সাত হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া কিন্তু যে সে কথা নয়। আর তেমন কাজই করেছেন এই যুবক। ভাল মতো গ্যাঁটের কড়িও খসেছে চোরের পিছনে ধাওয়া করতে গিয়ে?শেষপর্যন্ত কি মিলল সাধের এয়ারপড? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আজকালকার প্রজন্মের বহু লোকেরই রয়েছে নানাবিধ ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেটের শখ। রীতিমতো দেখে-বেছে সেসব মনপসন্দ জিনিস নিজেদের সংগ্রহে রাখতে ভালবাসেন তাঁরা। ব্যতিক্রম নন এই যুবকও। বহু দিনের শখ ছিল অ্যাপেল সংস্থার একটি এয়ারপডের। শেষমেশ ইচ্ছাপূরণও হয়। হাতে আসে সাধের এয়ারপডটি। তবে সে সুখ বেশিদিন কপালে সয়নি তাঁর।
ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টারের বাসিন্দা ৩১ বছরের লিউইস এলিস। সম্প্রতি ব্যাংকক থেকে কাতারের দোহা-য় যাওয়ার পথে বিমানেই খোয়া যায় তাঁর সাধের আইপডটি। ব্যাপারটা মালুম হতেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন লিউইস। বিমানের ভিতরেই কোথাও পড়ে গিয়েছে কিনা খুঁজে দেখতে চেয়ে বিমানবন্দরের কর্মীদের কাছে বারবার আবেদনও জানান তিনি। তবে সেই অনুমতি তাঁকে দেননি বিমানবন্দর কর্মীরা। প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলেন, কর্মীরাই ওই এয়ারপডটি উদ্ধার করে এনে দেবেন তাঁকে। সে জন্য় বিমানবন্দরে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করেন তিনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত খালি হাতেই ফিরতে হয় তাঁকে।
আরও শুনুন: আজগুবি নয়, সত্যি! যাঁর শোকসভা আচমকা কথা বলে উঠলেন সেই বৃদ্ধা, তারপর?
তবে এত কিছুর পরেও হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না লিউইস। বাড়ি ফিরেই এয়ারপ্যাডটির জিপিএস লোকেশন ট্র্যাক করা শুরু করেন তিনি। বুঝতে পারেন, তাঁর এয়ারপড ততক্ষণে বিশ্বভ্রমণ শুরু করেছে। কাতার থেকে সেটা পৌঁছে গিয়েছে নেপালের কাঠমাণ্ডুতে। সেখান থেকে ফের থাইল্যান্ড হয়ে ফের ফিরে এসেছে দোহাতে। তার পরে আর নড়াচড়া করেনি এয়ারপডটি।
ততদিনে কেটে গিয়েছে পাঁচ-পাঁচটি মাস। অন্য কেউ হলে অ্যাদ্দিনে হয়তো ভুলেই যেত এয়ারপডটির কথা, বা নতুন একটা এয়ারপড কিনে ফেলত ফের। তবে তেমনটা মোটেই করেননি লিউইস। বরং উল্টে এয়ারপডটিকে যান্ত্রিক ভাবে ধাওয়া করা শুরু করেন তিনি। এ যেন ঠিক গুপ্তধন খুঁজে বেড়ানোর মতোই অনুভূতি।
দোহাতেই এয়ারপডটি পাকাপাকি ভাবে ঘাঁটি গেড়েছে দেখে এক বন্ধুর সঙ্গে লিউইস উড়ে আসেন দোহাতে। সেখানে এসে আলাপ হয় করিম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। লিউইসদের অ্যাডভেঞ্চারে জুড়ে যান তিনিও। তিন জনে মিলে শুরু হয় গুপ্তধন থুড়ি এয়ারপডের সন্ধান।
আরও শুনুন: বিলকিস বানোর ধর্ষণকারীদের মুক্তিতে চলল মিষ্টি বিতরণ, কী বলছেন বিলকিসের স্বামী?
অবশেষে জিপিএস ও ব্লুটুথ ট্র্যাক করতে করতে একটি আবাসনের সামনে এসে দাঁড়ান লিউইসরা। সেই আবাসনেরই কোনও একটি ফ্ল্যাটে রয়েছে তাঁর সাধের এয়ারপডটি। শুরু হয় খোঁজ। আর শেষমেশ মিলেও যায় সেটি। আইপডটি যে তাঁরই, সেই প্রমাণ হিসেবে আইপডের বাক্স থেকে বিল, অনেক কিছুই সঙ্গে এনেছিলেন তিনি। তবে সেসব ঝঞ্ঝাটের প্রয়োজন হয়নি। ওই আবাসনের এক ব্যক্তি নিজেই এয়ারপডটি ফেরত দিতে রাজি হয়ে যান। লিউইসের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি।
সত্যি বলতে, কোনও অ্যাডভেঞ্চারের চেয়ে কম কিছু ছিল না তাঁর এই সফর। তবে এই ঘটনায় তাজ্জব লিউইসের পরিবার। কম অবাক হননি নেটিজেনরাও। একটা একরত্তি হেডফোনের জন্য যে কেউ সাত হাজার কিলোমিটার উড়ে আসতে পারে, তা ভাবাটা বোধহয় কম কঠিনই নয়। আর এয়ারপড খুঁজতে গিয়ে বিমানভাড়া, থাকার খরচ, খাওয়াদাওয়া মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছেন ওই যুবক। নেটিজেনরা বলছেন, ওই টাকায় আরও দুটো এয়ারপড আরামসে কিনে নিতে পারতেন লিউইস। তবে পছন্দের এয়ারপডটিকে কাছছাড়া করতে মোটেই রাজি হননি ব্রিটেনের এই যুবক।