চলন্ত ট্রেনে ধূমপান করছিলেন এক তরুণী। আর তাতেই রেগে লাল এক সহযাত্রী। না, ট্রেনে ধূমপান করার জন্য আপত্তি জানাননি তিনি। তাঁর আসল আপত্তি মেয়েদের ধূমপান করাতেই। আর এই ইস্যুতেই আধুনিক নারীদের একযোগে তোপ দেগেছেন ওই ব্যক্তি। ঠিক কী বলেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মহিলাদের ধূমপান করা একেবারেই না-পসন্দ। তাই ট্রেনের মধ্যে এক ধূমপানরত তরুণীকে দেখে তাঁর ছবি তুলেছেন এক ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, সেই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ওই তরুণীকে রীতিমতো কটাক্ষ করেছেন তিনি। আর কেবল ওই তরুণীই নয়, ওই ব্যক্তির আক্রমণের নিশানায় সব আধুনিক নারীই। তাঁর মন্তব্যে এ কথা স্পষ্ট যে, ট্রেনে ধূমপান করে আইন ভাঙা নিয়ে তিনি মোটেও ভাবিত নন। কেবলমাত্র মেয়েদের আচার আচরণ নিয়েই তিনি সমালোচনা করতে আগ্রহী। কিন্তু সেই সমালোচনার জেরে উলটে নিজেই বিপাকে পড়ে গিয়েছেন ওই ব্যক্তি। কোনও মহিলার অনুমতি ছাড়া তাঁর ছবি তোলা এবং তা সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা যে একেবারেই বেআইনি কাজ, তা বোধহয় তাঁর হিসেবের মধ্যেই ছিল না। আর সে কথা মনে করিয়ে দিয়েই তাঁকে পালটা তোপ দেগেছেন নেটিজেনদের একাংশ।
আরও শুনুন: শ্রাদ্ধশান্তি পছন্দ নয়, তাই ক্যানসারের শেষ পর্যায়ে এসে উদ্দাম পার্টির আয়োজন ৭৬ বছরের মহিলার
কী ঘটেছে ঠিক?
আসলে, মেয়েরা কী করবে এবং কী করবে না, এ নিয়ে অনেক সময়ই স্বঘোষিত অভিভাবক হয়ে বসেন সমাজের এক শ্রেণির মানুষ। অন্যদের ব্যক্তিগত পরিসরের মধ্যে নাক গলিয়েই তাঁরা নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেন। এদিকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বারেবারেই দেখা যায়, মেয়েদের স্বাধীন নির্বাচনের অধিকারটিকেই মেনে নিতে তাঁদের আপত্তি। হ্যাঁ, ধূমপান করা যে কোনও মানুষেরই শরীরের পক্ষে যে খারাপ, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কোনও মেয়ে ধূমপান করলে এই নীতিপুলিশেরা সেই মেয়েটির স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবেন না, বরং তার চরিত্রের দিকে আঙুল তোলেন সহজেই। আর এখানেও ঘটেছে ঠিক তেমনটাই। ধূমপানরত তরুণীর ছবি পোস্ট করে ওই ব্যক্তির কটাক্ষ, এই যুগের আধুনিক মেয়েদের ধরনটাই এমন। তাদের দেখে তিনি নাকি একইসঙ্গে বিরক্ত এবং হতাশ। আধুনিক নারীদের প্রতি অনুকম্পাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: প্রাক্তন প্রেমিকার নামেই সদ্যোজাত কন্যার নাম রাখতে চান ব্যক্তি, চটে লাল স্ত্রী
সময় যত এগিয়েছে, ঘরের চার দেওয়ালের গণ্ডি থেকে বাইরের জগতে পা বাড়িয়েছে মেয়েরা। অর্জন করে নিয়েছে অর্ধেক আকাশের অধিকার। সেনাবাহিনীতে যোগদান, মহাকাশ সফর, আন্তর্জাতিক পুরস্কার জয়, একের পর এক কৃতিত্বের শিরোপা উঠেছে একালের মেয়েদের মাথায়। কিন্তু সেই সাফল্যের খতিয়ানকে এককথায় নাকচ করে দিয়ে অনেকেই মনে করেন, সমাজের ঠিক করে দেওয়া মাপকাঠিতেই কেবল মেয়েদের বিচার করা যায়। এই ব্যক্তির সেই মনোভাবকেই সপাটে উড়িয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা। তাঁদের সাফ জবাব, “লোকে বলে, ধূমপান পুরুষের ফুসফুস নষ্ট করে, কিন্তু মেয়েদের চরিত্র।” নারী আর পুরুষের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য কেন হবে, এই প্রশ্ন তুলেই সরব হয়েছেন নেটিজেনরা। পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব দেখাতে গিয়ে উলটে নিজেই বেকায়দায় পড়েছেন ওই ব্যক্তি।