আপনি কি জানেন, ঘুম থেকে উঠলে আপনার উচ্চতা বেড়ে যায়? আপনার যা উচ্চতা, মোটামুটি তার থেকে ১ সেমি উচ্চতা বাড়তে পারে। না, অবেক হবেন না। এ-কথা বলছে বিজ্ঞানই। বিজ্ঞানের বাখ্যা এক্ষেত্রে ঠিক কী? আসুন শুনে নিই।
উচ্চতা কম হলে চিন্তায় পড়ে যান অনেকেই। বিশেষত, সেনা বা এই ধরনের বিশেষ চাকরিত ক্ষেত্রে ন্যূনতম উচ্চতার প্রয়োজন হয়। আমরা জানি, সাধারণত বয়ঃসন্ধির পর আর উচ্চতা বাড়ে না কারোরই। অনেকের মতে, উচ্চতা নাকি সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে জিনের উপর। অর্থাৎ মা-বাবার উচ্চতা বেশি হলেই সন্তানের উচ্চতা বেশি হওয়া সম্ভব। যদিও বিজ্ঞান এই তথ্যকে পুরোপুরি স্বীকৃতি দেয় না। কিন্তু দিনের নির্দিষ্ট একটা সময়ে উচ্চতা যে বেড়ে যায়, সে-কথা স্বীকার করছে বিজ্ঞানও।
আরও শুনুন: লকডাউনে বানিয়েছিলেন বিমান, তাতেই সপরিবারে ইউরোপ ঘুরলেন কেরলের যুবক
বৈজ্ঞানিকদের মতে, এর পিছনে কোনও অতিলৌকিক ব্যাপার নেই। খুব সাধারণ কারণেই এমনটা হয়। আর এই উচ্চতা পরিবর্তন এতই সামান্য, যে তা খালি চোখে ধরাও পড়ে না। ঘুম থেকে উঠেই যদি কেউ তাঁর উচ্চতা মাপেন, তাহলেই এই সামান্য তারতম্য নজরে পড়বে। আসলে পুরো রহস্যটাই লুকিয়ে আছে আমাদের শরীরে, বলা ভালো, আমাদের শিরদাঁড়ায়। যে-শিরদাঁড়ার বিশেষ গঠনের জন্য মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের থেকে অনেকটাই সুবিধা পেয়েছে, সেই শিরদাঁড়ার সংকোচন প্রসারণের ফলেই সামান্য উচ্চতার তারতম্য ঘটে মানুষের। সাধারণত আমাদের মেরুদণ্ড ৩৩টি ‘ভার্টিব্রা’র সমষ্টি। যার দরুন আমাদের মেরুদণ্ড পাঁচটি অংশে বিভক্ত। এই ভার্টিব্রাগুলি আবার পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্কের মাধ্যমে। যেগুলি আসলে বিয়ারিং-এর মতো কাজ করে। এই জোড় অংশে তরুণাস্থি থাকার দরুণ, মেরুদণ্ড নানা কাজ করতে পারে। আবার উচ্চতা বাড়া-কমার জন্যও দায়ী এই ডিস্কগুলিই। সাধারণত দিনে আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি। শরীরের ভারও বইতে হয় মেরুদণ্ডকে। কিন্তু সারারাত ঘুমোনোর দরুন শরীর অনেকটা বিশ্রাম পায়। অর্থাৎ মেরুদণ্ডও বিশ্রাম পায়। এই অবকাশে তরুণাস্থিগুলি খানিকটা প্রসারণের সুযোগ পায়। ফলত ঘুম থেকে ওঠামাত্র যদি উচ্চতা মাপা যায়, তাহলে মানুষের উচ্চতা সামান্য বৃদ্ধি পায়।
আরও শুনুন: আজব পেশা! চুইংগাম ফুলিয়ে মাসে বিপুল অর্থ আয় করেন এই তরুণী
যদিও এর পাশাপাশি অন্য আর-এক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন বৈজ্ঞানিকরা। সম্প্রতি নাসা-র একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। এই গবেষণা অনুযায়ী, উচ্চতার তারতম্যের কারণ হল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। আমরা যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকি, আমাদের শরীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব সেভাবে অনুভব করে না। যার ফলে শিরদাঁড়ার মধ্যে থাকা ডিস্কগুলি সামান্য প্রসারিত হতে পারে। বিজ্ঞানীদের আরও দাবি, মহাকাশচারীরা চাঁদে গেলেও তাঁদের উচ্চতা বেড়ে যায়। যেহেতু সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর থেকে কম, তাই চাঁদে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায় উচ্চতা। আবার পৃথিবীতে ফিরে এলে পুনরায় আগের উচ্চতায় ফিরে আসে মহাকাশচারীরা।
অর্থাৎ, ঘুম থেকে ওঠার পর মানুষের উচ্চতা যে সামান্য বাড়ে, এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। তা-ও যদি সন্দেহ কিছু থেকেই যায়, তবে অবশ্যই পরীক্ষা প্রার্থনীয়।