মাইদা বিলাল। বসনিয়ার এই মহিলা ও তাঁর সহযোদ্ধারা ‘সবে মিলে’ সবসুদ্ধ ৫০৩ দিন একটি নদীব্রিজকে আগলে রেখে বসেছিলেন। সদ্য ২০২১ গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ-বিজেতা মাইদা বিলালের সেই লড়াইয়ের গল্প শোনালেন, সোহম দাস।
আচ্ছা, আপনি একটা নদীব্রিজকে কতদিন ধরে আগলে রাখতে পারেন? ১ দিন, ২ দিন, ৩ দিন, কি আরেকটু বেশি করে ভাবলে ৫০ দিন… কিন্তু তার বেশি কি সম্ভব? এই ধরা যাক, ৫০০ দিন? শুনতে অবাক লাগছে তো? অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, এই বিপুলা পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম এক কোণে এমন অসম্ভব কাজটিই করে দেখিয়েছেন একজন চল্লিশ বছর বয়সী মহিলা। আমরা কথা বলছি সদ্য ২০২১ গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ-বিজেতা মাইদা বিলালকে নিয়ে। বসনিয়ার এই মহিলা ও তাঁর সহযোদ্ধারা ‘সবে মিলে’ সবসুদ্ধ ৫০৩ দিন একটি নদীব্রিজকে আগলে রেখে বসেছিলেন।
ব্যাপারটা তাহলে খোলসা করেই বলা যাক। বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা দেশটির অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে। এই অঞ্চলকে একত্রে বলা হয় ‘বলকান অঞ্চল।’ এই যে গত ফুটবল বিশ্বকাপে লড়াকু ফুটবল খেলে, সকলকে চমকে দিয়ে একেবারে ফাইনাল অবধি চলে গেল যে দলটি, সেই ক্রোয়েশিয়ারই অতি নিকট প্রতিবেশি এই বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা।
নদী-জঙ্গলে পরিব্যাপ্ত এই দেশেরই এক ছোট্ট, অখ্যাত, গ্রাম্য নদীকে নিয়ে আমাদের এই গল্প। নদীর নাম ক্রুশচিশা। মধ্য বসনিয়ার ক্রুশচিশা পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী গিয়ে মিশেছে লাসভা নদীতে। পর্বতের নামেই নাম হয়েছে নদীর। ইউরোপের শেষ তিনটি অবাধ-প্রবাহিত নদী বা ফ্রি ফ্লোয়িং রিভারের মধ্যে অন্যতম এই ক্রুশচিশা। ফ্রি ফ্লোয়িং রিভার মানে কী? অর্থাৎ, যে নদীর ওপর বসেনি কোনও বাঁধ, কিংবা তৈরি হয়নি কোনোরকম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
আরও শুনুন: দরজায় নেই কপাট! ঘরে পোষা হয় সাপ! দেশের কোথায় আছে এমন সব গ্রাম?
শুনতে অবশ্য খানিক বেমানান লাগছে, তাই না? ভাবছেন, বাঁধ নির্মাণ হবে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে, এ তো বেশ ভালো কথাই। উন্নতির সোপান তো এগুলোই। এগুলো না হলে সেটা তো একপ্রকার পিছিয়ে থাকাই।
হ্যাঁ, আমরা যারা প্রযুক্তির আস্ফালন দেখেও তাকে মেনে নিতে শিখেছি, তাদের কাছে এমনটাই মনে হবে। কিন্তু যাঁদের বড় হয়ে ওঠা নদীর ধারের জঙ্গলে লুকোচুরি খেলতে খেলতে, যাঁদের জীবনধারণকে আলিঙ্গন করেছে নদীর স্বচ্ছ, কাকচক্ষু জল, তাঁদের কাছে যে সেই নদীটাই সব।
আরও শুনুন: Mirror: ভাঙা আয়নায় মুখ দেখলে কি সত্যি ঘনিয়ে আসে অমঙ্গল?
বসনিয়ার শাসনব্যবস্থার আইনি ফাঁক গলে প্রায়শই শুরু হয় অবৈধ নির্মাণ, রক্ত ঝরে প্রকৃতির নিজস্ব শরীরে। এই যেমন, ক্রুশচিশা নদীর কথাই বলা যাক। শান্ত এই প্রবাহিনীর ওপরেও হঠাৎ জারি হল বাঁধ তৈরির আদেশ। দুটি বড় বাঁধ, একটি ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। অদ্ভুতভাবে, এই পুরো অনুমতিটাই জোগাড় করা হয়েছিল বেআইনি উপায়ে। একটু আগে যেসব নদী-পাগল মানুষদের কথা বলছিলাম, মাইদা বিলাল তাঁদেরই একজন। তাঁর গ্রামের নামও ক্রুশচিশা। এত সহজে যন্ত্রসভ্যতার গ্রাসে হারিয়ে যাবে শৈশবের স্মৃতি? ধ্বংস হয়ে যাবে এত প্রাচীন গাছের সার? মানুষের অর্থলোভের শিকার হবে পাথরের খাঁজে খেলা করা ছোট ছোট মাছগুলো?
না, মাইদা এত সহজে ছেড়ে দিলেন না। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হল তাঁদের লড়াই। এই ধরনের প্রকল্প নির্মিত হলে পরিবেশের কতখানি ক্ষতি হতে পারে, সেই বিষয়ে লিখতে শুরু করলেন স্থানীয় এক শিক্ষক। ধীরে ধীরে সেই লেখা ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক মাধ্যম জুড়ে। গ্রামবাসীরা বুঝতে পারলেন, এই ধরনের কাজ আদপে কোনও উন্নতির দিশাই দেখাবে না।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।