চাষ-আবাদ করে সংসার টানা দায়। বৃষ্টির অনিশ্চয়তা, নিম্নমানের মাটি, ফসলের রোগ- এসব সামলে যেটুকু ফসল ঘরে ওঠে, তার দাম পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। আর তাই পেশা ছাড়তে চাইছেন অনেকেই। মহারাষ্ট্রের এই কৃষককেই দেখুন না, চাষ-আবাদ ছেড়ে হেলিকপ্টার কিনতে চান তিনি। তার জন্য বিপুল অঙ্কের ঋণও তিনি চেয়ে বসেছেন ব্যাঙ্কের কাছে। কেন এমন ইচ্ছে তাঁর? শুনে নিন।
বর্ষা আসার নাম নেই। অনাবৃষ্টিতে মাঠ ফেটে চৌচির। এ দেশের কৃষকদের জন্য সমস্যা যেন দাঁড়িয়েই রয়েছে ওঁৎ পেতে। তার উপর মাটির মান খারাপ। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও সেই পরিমাণের ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না কৃষকেরা। তার উপর রয়েছে পোকামাকড়ের উপদ্রব আর ফসলের রোগ। এত সব ঝঞ্ঝাটের পরে ফসলের দাম পেতেও নাজেহাল অবস্থা চাষীদের। প্রতিবছরই বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক আত্মহত্যার খবর আসে। ঋণের বোঝা থেকে শুরু করে চাষে লোকসান, নানা কারণ লুকিয়ে থাকে তার পিছনে। আর সেই পরিসংখ্যানে এগিয়ে মহারাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে চাষ-আবাদ থেকে হাত তুলে নিতে চাইছেন বহু কৃষকই। অন্য কোনও রুজিরোজগারের রাস্তা খুঁজে নিতে চাইছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: গোঁফ-দাড়ি নৈব নৈব চ! বিয়ের বাজারে পাত্রকে হতে হবে ‘ক্লিন শেভেন’, জারি নির্দেশিকা
মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলির তাকোদা গ্রামের বাসিন্দা কৈলাশ পাতাঙ্গে। চাষ-আবাদের এই অবস্থা দেখে পেশা বদলাতে চান ২২ বছরের এই তরুণ কৃষক। সব মিলিয়ে দু-একর জমির মালিক কৈলাশ। এতদিন চাষ-আবাদ করেই সংসার চালাতেন তিনি। এ বছর দেশে বর্ষা এসেছে বেশ দেরিতে। অনাবৃষ্টি, খরায় চাষের ক্ষতি হয়েছে মারাত্মক। তার উপর অন্যান্য সমস্যা তো লেগেই রয়েছে। ফসল বেচে লাভের মুখ দেখা তো দূর, দিনকে দিন চাষ-আবাদ আরও কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে কৈলাশের মতো কৃষকদের জন্য। গত দুবছর ধরে সয়াবিন চাষ করেছেন কৈলাশ। বৃষ্টির অভাবে লাভ হয়নি এতটুকুও।
তাই এবার অন্য কোনও লাভজনক ব্যবসার পথে এগোতে চান কৈলাশ। কী করবেন, ভেবেও ফেলেছেন মোটামুটি। আর সেই পরিকল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যেই গোরেগাঁওয়ের ব্যাঙ্কের দ্বারস্থও হয়েছেন তিনি। ব্যাঙ্কের কাছে ইতিমধ্যেই ৬ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার ঋণও চেয়ে বসেছেন কৈলাশ। ওই টাকা দিয়ে একটি হেলিকপ্টার কিনতে চান। আর সেটা ভাড়া দিয়েই সংসার চালাতে চান তিনি।
আরও শুনুন: কন্যাসন্তান জন্মালেই রোপণ ১১১টি চারা গাছ, কোথায় পালিত হয় এই প্রথা?
কৈলাশের এমন ছকভাঙা ইচ্ছা দেখে চোখ কপালে তুলেছেন অনেকেই। তবে নিজের সিদ্ধান্তে তিনি অনড়। জানিয়েছেন, কেন, বড় মানুষেরই কেবল বড় বড় স্বপ্ন থাকতে পারে? কৃষকেরাও তো বড় স্বপ্ন দেখতে পারেন। আর সেই পথেই হাঁটতে চান কৈলাশও। ইদানীং হেলিকপ্টারের ব্যবসায় বেশ প্রতিযোগিতা। লাভও প্রচুর। তাই হেলিকপ্টার কেনার জন্য সোজা ব্যাঙ্কের কাছে ঋণের আবেদন করে বসেছেন তিনি। আপাতত ব্যাঙ্কের সম্মতির অপেক্ষায় দিন গুনছেন কৈলাশ।