মহাভারতের কাহিনি আদৌ সত্যি? সন্দেহ রয়েছে অনেকের মনেই। তবে এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে এমন কিছু নিদর্শন, যা ঘিরে দাবি ওঠে, এসব মহাভারত আমলের। ঠিক যেমন এই দীঘি, কথিত আছে এখানে লুকানো আছে পাণ্ডবদের সম্পত্তি! কোথায় আছে এমন জলাধার? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ, পঞ্চপাণ্ডবের জয়লাভ। অনেকের কাছে এটিই মহাভারতের শেষ। কিন্তু আদতে তা নয়, এরপরেও একটা বড় অধ্যায় হিসেবে রয়েছে ‘মহাপ্রস্থান’। এই পর্বে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে স্বর্গের উদ্দেশে রওনা দেন পাণ্ডবরা। ছেড়ে যান, যাবতীয় ঐশ্বর্য-সম্পত্তি, সবকিছুই। কিন্তু তারপর, পাণ্ডবদের সেই বিপুল সম্পত্তি ভোগ করল কে?
শোনা যায়, সেই ধনসম্পদ এখনও গচ্ছিত রয়েছে। স্বর্গারোহনের আগে সেসব বিশেষ এক জায়গায় রেখে যান খোদ পাণ্ডবরাই। সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে যান বিশেষ এক ব্যক্তিকে। তিনি আর নেই, তবে পাণ্ডবদের সম্পদ অন্য কারও হাতে যায়নি। কারণ, তা লুকানো আছে জলের গভীরে। কথা বলছি, হিমাচলের কামরুনাগ হ্রদ সম্পর্কে। কথিত আছে, এখানেই লুকানো পাণ্ডবদের সম্পদ। এই জলাধার বর্তমানে পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। তার নেপথ্যে রয়েছে পঞ্চপাণ্ডবের লুকিয়ে রাখা ধনরাশি এবং তাকে ঘিরে জন্ম নেওয়া জনশ্রুতিই। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই জলাধার ও সংলগ্ন এলাকা রক্ষার দায়িত্ব কামরুনাগ বাবা নামে এক সিদ্ধপুরুষের। একসময় তাঁর কাছেই নিজেদের সম্পত্তি গচ্ছিত রেখে যান পাণ্ডবরা। নিজে না ভোগ করে সেই বিপুল ধন হ্রদের জলে লুকিয়ে রাখেন কামরুনাগ। সোনা, হীরে, জহরত কত কিছুই না ছিল তাতে! বছরের পর বছর সেই সম্পত্তি লুকানো আছে একইভাবে। হরনের চেষ্টাও হয়েছে বহুবার, তবে সফল হননি কেউ! কারও চোখ হারিয়েছে, কেউ আবার ধনে-প্রাণে শেষ হয়েছে। যতবারই এমন ঘটনা ঘটেছে, আরও পোক্ত হয়েছে স্থানীয়দের বিশ্বাস। সকলে একপ্রকার ধরেই নিয়েছেন, এই হ্রদ আজও রক্ষা করছেন কামরুনাগ।
তবে এই হ্রদের কাছে পৌঁছানো সহজ নয়। লম্বা পাহাড়ি পথ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়। একবার গেলেই তৃপ্ত হবে চোখ আর মন! পাহাড়ের সৌন্দর্য তো বটেই, সবুজ জলের মোহ সহজে ভোলা কঠিন। অনেকে অবশ্য ধর্মের টানে ছুটে যান। এখানে মনের ইচ্ছা জানালে তা পূরণ হবেই, এমন বিশ্বাসও রয়েছে অনেকের। কেউ কেউ আবার সেই বিশ্বাসে জলের মধ্যে টাকা পয়সাও ভাসিয়ে যান। অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড় বর্তমানে অবশ্য সমস্যাও ডেকে আনছে। সুন্দর পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ ধীরে ধীরে নোংরা হচ্ছে। হ্রদের জলও আগের মতো নেই। তবু বিশ্বাসে মিলায় বস্তু…! তাই বারবার দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ হাজির হন এখানে।