মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ১১৫ ফুট। অথচ সেটি তৈরি করা হয়েছে একরাতের মধ্যেই। আবার মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে যে পাথরগুলি দিয়ে সেগুলির অস্তিত্বও মন্দিরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নেই। এসব শুনে যে কারও মনে হতে মন্দিরটি কি ভূতের তৈরি? প্রচলিত জনশ্রুতি সেই কথাকেই স্বীকৃতি দেয়। আসুন শুনে নেওয়া যাক ভূতের তৈরি সেই মন্দিরের গল্প।
প্রতিবছর ভূত চতুর্দশীর রাতে মন্দিরের ভিতর থেকে ভেসে কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজ। অথচ সাহস করে ওই রাতে মন্দিরের পথে পা পড়ে না কারও। কারণ স্থানীয়দের বিশ্বাস, গোটা মন্দিরটাই নাকি ভূতের তৈরি। তাই ভিতরে নির্ঘাত ভূতের দল কিছু করছে। এমন বিশ্বাসের নেপথ্যে অবশ্য কারণও কিছু কম নেই। শোনা যায়, ১১৫ ফুট উচ্চতার এই মন্দির নাকি তৈরি করা হয়েছিল একরাতের মধ্যেই। আবার যে পাথরগুলি ব্যবহার করা মন্দিরটি বানানো হয়েছে, মন্দিরের আশেপাশে কোথাও তার অস্তিত্ব নেই। সুতরাং এমন কাজ যে কেবলমাত্র ভূতের দ্বারাই সম্ভব, একথাই মেনে নিয়েছেন স্থানীয়রা।
আরও শুনুন: মা কালীর বিশেষ কয়েকটি রূপের পুজো করেন না গৃহস্থরা, নেপথ্যে শাস্ত্রের কোন কারণ?
মধ্যপ্রদেশের মোরেনা এলাকায় অবস্থিত ১১৫ ফুটের এই মন্দিরের আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব। মন্দিরটির নির্মাণও বেশ অদ্ভুত। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হতে পারে মন্দিরটি অসম্পূর্ণ। এর মধ্যে থাকা পাথরগুলি হয়তো সামান্য ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। যেন কোনও নির্দিষ্ট বাঁধনে পাথরগুলিকে আটকানো নেই। অথচ এতবছর ধরে ঝড় জল ভূমিকম্প সব কিছুই অনায়াসে সহ্য করে নিয়েছে এই মন্দির। ভূত নিয়ে জনশ্রুতিকে পোক্ত করার জন্য এরকম অনেক কারণ থাকলেও, এই মন্দির নির্মাণ সম্পর্কে ইতিহাস কিছুটা অন্যরকম কথা বলে। একাদশ শতাব্দীতে এই মোরেনা অঞ্চলে ছিল খুশওয়া বংশের রাজত্ব। সেই বংশের রাজা কীর্তিরাজের রানি কাঁকনবতী ছিলেন শিবের পরম ভক্ত। সেই রানির ইচ্ছা অনুসারেই রাজা এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। আর রানির নামেই সেই মন্দিরের নাম রাখা হয় কাঁকনমঠ মন্দির। তবে মন্দিরের বাহ্যিক গঠন দেখে কিছুতেই বিশ্বাস হবে না যে, এ কোনও মানুষের কাজ। বিশেষত এক রাতের মধ্যে কোনও মানুষের পক্ষে এমন মন্দির তৈরি করা প্রায় অসম্ভব।
আরও শুনুন: শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থানেই তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ রূপ দিয়েছিলেন বাংলার প্রথম কালী বিগ্রহের
এছাড়াও এই মন্দির নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত পাথরগুলি কীভাবে সেই চত্বরে আনা হল তা নিয়েও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায় না। জনশ্রুতি মতে, রানির ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে স্বয়ং মহেশ্বর তাঁর অনুচরদের পাঠিয়ে ছিলেন এই মন্দির তৈরি করার জন্য। সেই অনুচরেরা আর কেউ নয় ভূতের দল। তেনারাই নাকি বিশেষ কায়দায় এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। হঠাৎ সকালবেলা মানুষ দেখতে পেয়ে তেনারা মন্দিরের কাজ অসমাপ্ত রেখেই চম্পট দেন। তাই অনেকে মনে করেন মন্দিরটি আদতে সম্পূর্ণ তৈরি নয়। তবে এই ভূতের তৈরি মন্দির দেখতে বছরভর পর্যটকেরা ভিড় জমান মধ্যপ্রদেশের এই মন্দিরে। মন্দিরের গল্পগাছা এখনও মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে স্থানীয়দের।