স্কুলে যৌনশিক্ষা? ছি ছি, সে আবার কী কথা! হ্যাঁ, যৌনশিক্ষা নিয়ে আমাদের মত খানিক এরকমই। কিন্তু সেই সংকোচের জেরে যে কৌতূহল প্রকাশের পথ পাচ্ছে না, তাই কি আরও বিকৃত রূপ নিচ্ছে?
সম্প্রতি এক ওয়েব সিরিজে দেখা গিয়েছিল, এক সহপাঠিনীর নগ্ন ভিডিও তারিয়ে তারিয়ে দেখছে তারই সহপাঠীরা। জানা যায়, এর আগেও তার সঙ্গে শরীরী সম্পর্কের কথা বন্ধুমহলে ফলাও করে বলতে সংকোচ করেনি তারই প্রেমিক। অথচ এরা সকলেই স্কুলপড়ুয়া, নাবালক কিংবা নাবালিকা। শুধু কি নারীশরীর নিয়েই এই কৌতূহল? তাও যে নয়, সে কথা তুলে এনেছিল আর-একটি ছবি। সেখানে নামী বেসরকারি স্কুলের শৌচাগারে হস্তমৈথুন করে এক কিশোর, যে ঘটনার ভিডিও করে তা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয় তারই সহপাঠীরা। এইসব ঘটনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তা হল, স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে যৌনতা বিষয়ে কোনোরকম প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনার পরিসর খুলে না দেওয়া। তাঁদের রোজনামচায় যৌনতা কীভাবে আসছে, তা নিয়ে কথা না হওয়া। পরিবার কিংবা স্কুল, কোথাও যে কৌতূহল ঠিকঠাক উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না, সে কৌতূহল যে আরও চেপে বসবে, এমনটা কি খুব আশ্চর্যের?
আরও শুনুন:
আসলে শরীর নিয়ে কৌতূহল তো বয়ঃসন্ধির সময় থেকেই বাড়তে থাকে। তার উপর আজকের দিনে নেটদুনিয়ার সূত্রে সবকিছুই তো হাতের মুঠোয়। সেখান থেকে যৌনতার যে কোনও ছবিই সামনে আসতে পারে। একইসঙ্গে মিডিয়ার সূত্রে সামনে আসে যৌনতার নানারকম ইঙ্গিত। এই সবকিছু কোনও সদ্য কিশোর বা কিশোরীর সামনে যে পরিসর খুলে দিচ্ছে, তা অনেকটা নিষিদ্ধ ফলের মতো। আকর্ষণীয়, কিন্তু গোপন। সেখানে সঠিক বিজ্ঞানসম্মত যৌনশিক্ষা না পাওয়ার দরুন একদিকে যৌনভাবনায় অপরিণতি থেকে যায়, অন্যদিকে যৌনতার ক্ষেত্রে সহিংস আচরণও জাঁকিয়ে বসতেই পারে। র্যাগিং সংস্কৃতির মধ্যে কিন্তু শারীরিক ও মানসিক দুধরনের হেনস্তাই থাকে, থাকে যৌন ইঙ্গিতও। আবার বন্ধুদের নগ্নতা দেখতে চাওয়ার মধ্যেও ফুটে উঠছে বিকৃত কৌতূহলই।
আরও শুনুন:
সোশাল মিডিয়ায় লকডাউন! অ্যাকাউন্ট নাকি নিজের ইমেজ হারাবার ভয়েই হাহাকার?
অথচ স্কুলে সেক্স এডুকেশন চালু করার চেষ্টা হয়েছে খোদ সরকারি স্তরেই। ২০০৫ সালেই, স্কুলের জন্য ‘অ্যাডোলেসেন্স এডুকেশন প্রোগ্রাম’ শুরু হয়েছিল। চালু হয়েছিল লাইফস্টাইল ক্লাস। কিন্তু যে দেশে ‘সেক্স’ শব্দের ব্যবহারেই ট্যাবু রয়ে গিয়েছে, সেখানে তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি। এমনকি একে পশ্চিমি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা বলেও অভিযোগ তুলেছে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্য। যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় সংকোচের কারণেই সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে এই শিক্ষার সুযোগ। কিন্তু সেই সংকোচের জেরে শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের কী পরিণতি হচ্ছে, সে কথা না ভাবলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।