পরমাণু বিস্ফোরণেও হবে না কোনও ক্ষতি। দিব্য বেঁচে থাকবে। গোটা দেশ ধ্বংস হলেও, এর গায়ে আঁচড়টুকুও লাগবে না। মনে হতেই পারে বীভৎস কোনও প্রাণীর কথা বলছি। একেবারেই না, কথা বলছি আরশোলা সম্পর্কে। গবেষণা বলছে, পরমাণু বিস্ফোরণেও যদি কোনও প্রাণী বেঁচে থাকে, তা হল এই আরশোলা। কিন্তু কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ছোটখাটো চেহারা। পায়ের তলায় পিষে দিলে জীবন শেষ। এমনিতে মাটিতে চলাফেরা করে। কিন্তু উড়লে নাকি ভয়ঙ্কর। বলা ভালো, আতঙ্কের। অন্তত কয়েকজনের কাছে তো বটেই। সেই আরোশোলা নাকি পরমাণু বোমার ঘায়েও দিব্যি থাকে। মৃত্যু দূর অস্ত, এতটুকু আঁচ লাগে না এদের গায়ে।
পরমাণুর কথা আলোচনায় ফিরেছে ভারত-পাক অশান্তির প্রসঙ্গ ধরে। দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর। অতএব যুদ্ধ হলে কোনও একটি দেশ যদি পরমাণু ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাহলে বিধ্বংসী কাণ্ড হবে বইকি! তবে পরমাণু ক্ষমতা সম্পন্ন দেশকে সবসময় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। চাইলেই তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের এক্তিয়ার নেই কারও। এমনটা করলে ফলাফল কী হতে পারে, তা গোটা বিশ্বের মানুষ ভালমতো জানে। হিরোশিমা নাগাসাকির ঘটনা এখনও অনেকের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। কিন্তু যুদ্ধের আবহে কী হবে, কখন হবে, আগে থেকে হিসাব রাখা কঠিন। সেই আশঙ্কা থেকেই পরমাণু বিস্ফোরণের আতঙ্ক। আপাতভাবে এই আতঙ্ক সকলের। ব্যতিক্রম আরশোলা।
বিষয়টা সামনে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। হিরোশিমা-নাগাসাকির পরমাণু বিস্ফোরণে হাজার হাজার প্রাণহানির খবর ধীরে ধীরে সামনে আসতে থাকে। হাহাকার আর আতঙ্কের মাঝে এতটুকু আশার আলো খুঁজে পাচ্ছিলেন না কেউ। কোথাও প্রাণের চিহ্নমাত্র ছিল না। এমন সময় দেখা যায়, শহর কিছু আরশোলা দিব্যি বেঁচে আছে। বিষয়টা রীতিমতো অবাক করে বিজ্ঞানীদের। সকলেই হামলে পড়েন খতিয়ে দেখার জন্য। তাতে দেখা যায়, সত্যিই পরমাণু বিস্ফোরণের আঘাত সহ্য করেছে ওই ছোট্ট প্রাণী। তেজস্ক্রিয় বিক্রিয়া পর্যন্ত হয়নি আরশোলার দেহে। মনে হতে পারে, আকারে ছোট তাই এমন। কিন্তু, তার চেয়েও ছোট পতঙ্গ কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়েছিল পরমাণু বিস্ফোরণের পর। অথচ আরশোলা দিব্যি ছিল।
বিষয়টা নিয়ে গবেষণা চালাতে থাকেন বিজ্ঞানীরা। জানা যায়, আরশোলার দেহের গঠন এমনই। যে কোনও প্রতিকূল অবস্থা সহ্য করতে পারে এই প্রাণী। তা সে পরমাণু বিস্ফোরণের মতো ভয়ঙ্কর কিছু হলেও। মাথা কেটে দিলেও বেঁচে থাকতে পারে। খাবার-জল ছাড়া তো আরও অনায়াসে জীবনযাপন চলে এই প্রাণীর। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় আরশোলার গড় বয়স মানুষের অপেক্ষা ১০০ গুন বেশি। মানুষ জন্মের বহু আগে থেকে এরা পৃথিবীতে রয়েছে। এতদিনে আরও কতশত প্রাণী এসেছে, হারিয়ে গিয়েছে। ডায়নোসরের মতো বিকট, বীভৎস প্রাণীও হারিয়ে গিয়েছে। টিকে থেকেছে স্রেফ আরশোলা। আগামীতেও হয়তো থাকবে। কারণ যে পরমাণু বিস্ফোরণেও বেঁচে থাকে, তার বংশ তো স্রেফ চপ্পলের ঘায়ে ধ্বংস করা যায় না!