একটাই গাছ। তবে তাকে গোটা বাগান বললেও বোধহয় ভুল হবে না। কারণ সেই একটি গাছেই ফলে অন্তত তিনশো প্রজাতির আম। আর সেই আশ্চর্য গাছটিকেই সযত্নে লালন করে চলেছেন ৮২ বছরের কলিমউল্লাহ খান। এই গাছের দৌলতে এসেছে স্বীকৃতিও, তিনি হয়ে উঠেছেন ভারতের ‘ম্যাঙ্গোম্যান’। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর গল্প।
প্রতিদিন কয়েক মাইল হেঁটে প্রিয় আম গাছটির কাছে ছুটে যান বৃদ্ধ। গত কয়েক দশক ধরে এটাই তাঁর রুটিন। কেননা, এই গাছ তাঁর কাছে লক্ষ্মী। ১২০ বছরের পুরনো এই আম গাছই তাঁকে এনে দিয়েছে সুনাম। আর এ আমগাছ তো যেমন তেমন গাছ মাত্র নয়, বলতে গেলে, এ এক আশ্চর্য গাছ। কেননা এই একটি গাছেই ফলন হয় অন্তত ৩০০ প্রজাতির আমের। অদ্ভুত এই গাছটিরই দেখভাল করেন লখনউয়ের মালিহাবাদের বাসিন্দা কলিমউল্লাহ খান। ঠিক কবে থেকে যে গাছটিকে ঘিরে জীবন আবর্তিত হচ্ছে, তা আজ আর তাঁর ভাল মনে পড়ে না। গত কয়েক দশক ধরে রোদ-জল মাথায় করে রোজ গাছটির পরিচর্যা করেন কলিম। এ নিয়মে অন্যথা হয় না কখনও।
আরও শুনুন: ৭ ঘণ্টায় ৭৫ বার গাইলেন জাতীয় সঙ্গীত, দেশকে ভালবেসেই বিশ্বরেকর্ড তরুণীর
কলিমের যত্নের মান রেখেছে গাছটিও। মরসুমের পর মরসুম ধরে নানা প্রজাতির আমের ফলন হয়েছে এই একটি গাছেই। কালীমের কথায়, খালি চোখে মনে হতে পারে সাধারণ একটা মাত্র গাছ। কিন্তু মনের চোখ খুলে দেখলে এ যেন একটা গোটা বাগান। হরেক রকম আমের আশ্চর্য সমাহার একটি গাছেই। এমনিতে, আম গাছ নিয়ে পরীক্ষা করা যেন কলিমের নেশা। বেশ অল্প বয়স থেকে এই কাজ শুরু করেছিলেন। দুই ভিন্ন প্রজাতির আমগাছের জোড়কলমে নতুন গাছ তৈরির চেষ্টা করতেন। সফলও হয়েছিলেন। অন্তত ৭ রকমের নতুন ধরনের আমগাছ বা নতুন প্রজাতির আম এসেছে তাঁর হাত ধরেই। তবে ঝড়বাদলে এরকম কত গাছ যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, ১২০ বছরের পুরনো গাছটি কিন্তু বরাবরই তাঁর আশা পূরণ করেছে।
আরও শুনুন: Meme ফেরাল ভাগ্য, বাতিল করেও মহিলাকে ফের ইন্টারভিউতে ডাক সংস্থার
নতুন নতুন প্রজাতির আমের অভিনব নামও দিয়েছেন কলিম। যেমন, ১৯৯৪ সালে নতুন একটি আমের নাম রেখেছিলেন ঐশ্বর্য, বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের নামে। এটি ছিল তাঁর অন্যতম পছন্দের আম। যেমন তার স্বাদ, তেমন গন্ধ, আর তেমনই রং। এক-একটা আমের ওজন ছিল এক কিলোগ্রামেরও বেশি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শচীন তেন্ডুলকরের নামেও আমের নামকরণ করেছেন কলিম। ‘আনারকলি’ নামে একটি আম ফলে তাঁর গাছে, তার আবার এক অঙ্গে বহু রূপ। অর্থাৎ, একটাই আমে মেলে দুরকম আমের স্বাদ। ফলত এই গাছটিকে কলিমের ল্যাবরেটরি বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হয় না।
আপাতত, এই আশ্চর্য আম গাছের দিকে তাকিয়েই যেন বেঁচে রয়েছেন কলিম। গাছটি যেন তাঁর আজন্মের সখা। গাছের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ মনে রাখুক ভারতের ‘ম্যাঙ্গো-ম্যান’-কেও, এটুকুই শুধু প্রত্যাশা কলিমের।