বজরঙ্গি ভাইজানের সলমন খানকে মনে আছে নিশ্চয়ই। বিপদের একশোটা পাহাড় ডিঙিয়ে মূক ও বধির মুন্নিকে ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছিল ভাইজান। তবে শুধু সিনেমাতেই নয়, এমন রূপকথা বাস্তবেও হয়। আর হয় বলেই পৃথিবীটা আজও সুন্দর। লোকে তাঁকে বলে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের মসিহা। সত্যিই তিনি তাই। রাজকুমার আর তাঁর দলবল, শুধু এ বছরই অন্তত ৭০ জন হারিয়ে যাওয়া শিশুকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। সরকারি আমলা থেকে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের মসিহা হয়ে ওঠার পথটা কেমন ছিল? শুনে নিন।
নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা। সাধারণত খবরের কাগজের এই অংশটার দিকে তেমন নজর দিই না আমরা। দিলে জানতে পারতাম এখনও প্রতিদিন কত লোক যে জেনে বা না জেনে ঘর হারিয়ে ফেলে, তার ইয়ত্তা নেই। বিশেষত শিশুরা। ওই বজরঙ্গি ভাইজানের মুন্নির মতোই। দেশ পাল্টে যায়, বাড়িঘর হয়ে ওঠে কোনও একটা সরকারি হোম। কতজন তো সেই সুযোগটুকুও পায় না! শেষমেশ হয়তো অন্ধকারের পথই পড়ে থাকে ওদের জন্য।
সেই সব হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের কথাই দিনরাত ভাবেন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের ডিরেক্টর রাজ কুমার। সরকারি ভাবে তাঁর পরিচয় তিনি আমলা, তবে হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাগুলোর কাছে তিনি মসিহা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আরও শুনুন: বৃক্ষরোপণ নেশা, ৪০ বছরে ১১ লক্ষেরও বেশি গাছ লাগিয়ে নজির জয়রামের
শুরুটা হয়েছিল বছর কয়েক আগে। সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে জুড়ে থাকায় এসব খবর তার কানে এসে উঠতই। তেমনই একবার পুলিশের কাছে জানতে পারেন, মুজফফরনগর রেলস্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি অজ্ঞাত পরিচয় শিশু। বাংলা ছাড়া আর কোনও ভাষা বোঝেও না, বলতেও পারে না বছর দশেকের ছেলেটি। তার উপরে এপিলেপ্সি রয়েছে তাঁর। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় তার দাদুর বাড়ি। সেখান থেকেই একা একা ট্রেনে চেপে বসেছিল সে। তার পর হারিয়ে যায়। পুলিশকে এতটুকুই জানাতে পেরেছিল ছেলেটি। মুজফফরপুরের একটি হোমেই জায়গা হয় তাঁর। সেখানকারই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে চিকিৎসা চলছিল তার।
এক বছরের মাথায় বেশ সেরে ওঠে ছেলেটি। তবে বাড়ির হদিস মেলেনি তার। কিন্তু রাজ কুমার হাল ছাড়েননি। তাঁর কাছে একমাত্র লক্ষ্য তখন ছেলেটিকে বাড়ি পাঠানো। নিজের দলবলকে নিয়ে কাজে নেমে পড়লেন রাজ। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে, রাস্তায় নেমে শুরু হল খোঁজ। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড দুই রাজ্যের কাছেই সাহায্য চেয়ে আবেদন জানান তাঁরা।
শেষমেশ ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথোরিটি অব ইন্ডিয়া (UIDAI) দপ্তরের দ্বারস্থ হন রাজ। তাদের ডেটাবেসের সঙ্গে মিলিয়ে শেষপর্যন্ত ছেলেটির নাম ঠিকানা খুঁজে পায় রাজের দল। জানতে পারেন, পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ ছিল বাচ্চাটি। অবশেষে রাজের উদ্যোগে সে ফেরে তার পরিজনের কাছে।
আরও শুনুন: এককালে করেছেন বাসন মাজার কাজও, সেই দুলারী দেবীর সৃষ্টিতেই এখন গর্বিত দেশবাসী
শুধু এই ছেলেটিই নয়, তার মতো আরও অসংখ্য শিশুকে নিজের ঘরে ফিরতে সাহায্য করেছেন রাজ। আরারিয়া বাস স্ট্যান্ডে নিখোঁজ ১৪ বছরের এক মূক-বধির মেয়েকে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দেন রাজ।
বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করে শুধু এ বছরই অন্তত ৭০ জন শিশুকে পরিজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তার মধ্যে ১৭ জন ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। আর এই কাজটা করেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পান রাজ।
বাকি অংশ শুনে নিন।